Wednesday, 12 August 2015

হু হু বাবা জানো না তো আমার ক্ষ্যামতা।

প্রবলেমের সাথে আমার মিতালি জন্ম থেকেই। আমার জীবনে কোনো কাজ সুষ্ঠু ভাবে হলোনা। আল্লাহমিঞা আমার লাইফে সমস্যাকে লেজুড় হিসেবে জুড়ে দিয়েছে। টেনশন নিয়ে নিয়ে এই বয়সেই মাথার চারটে চুল পেকে গেছে, বাকি গুলোও যে কোনদিন নির্বাণ লাভ করতে পারে। যেদিন কোনো সমস্যা থাকে না সেদিন চিন্তায় পড়ে যাই, হলো কি? আল্লাহমিঞার শরীর ঠিক আছে তো! আজ আমার লাইফ এতো স্মুদলি কাটলো কি ভাবে।
সেদিনকেও টেনশন একটুস কম ছিল, মনে মনে ভাবছিলুম আজকে ছোটো খাটো সমস্যার উপর দিয়ে গেছে বাবা! একদম টেনশন ছাড়া দিনও নয়, আবার খুব বেশি টেনশনও ছিল না।
কিন্তু কোথায় কি! আমার লাইফ এতো নিস্তরঙ্গ হতেই পারে না!
ফ্ল্যাটে ফিরেই আমার রুমে দেখি অদ্ভুত আওয়াজ, কেমন হড়পা বান আসার শব্দ। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম অ্যাটাচ্ড বাথরুম আওয়াজের উৎস। তারপর দেখলাম বাথরুমের জল নিকাশীর পাইপ হতে হড়হড় করে জল ঢুকছে। কি মুসিবত! ফ্ল্যাটে সেদিন ভাই ছিলো, তাকে বলতে সে বললে জল ঢুকছে তো আমি কি করব! সত্যিই তো, ও কি করবে! আদরে বাঁদর হয়েছে একটা।
অগত্যা আমিই গেলাম সিকিউরিটির কাছে, তাকে গিয়ে বললাম সমস্যার কথা। তিনি বললেন পরের দিন ব্যাপারটা সরেজমিনে তদন্ত নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঐ যে আমি , কিছুতেই ভরসা করতে পারি না। অতএব তাকে বগলদাবা করে চল্লুম আমাদের ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের নিচে আসতেই হড়হড় করে জলের শব্দ । সিকিউরিটি ব্যাপারটার গুরুত্ব অনুধাবন করে বললো কেউ বোধহয় ভুলবশত জলের কল খুলে রেখেছে। অতএব কে এই ভুলটা করেছে সেই নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেল উপরের ফ্ল্যাটে কেউ নেই, অতএব যা কিছু হয়েছে ছাতেই হয়েছে। দুজন মিলে ছাতে গিয়ে দেখলাম চারিদিকে জল থইথই। পাইপের জয়েন্ট খুলে গেছে, হড়হড় করে জল বেরোচ্ছে। এই ভাবে চললে কিছুক্ষণের মধে্যই ট্যাঙ্ক থেকে সব জল বেরিয়ে যাবে আর সারারাত জলের সমস্যা নিয়ে কাটাতে হবে। সিকিউরিটি সব কিছু দেখে শুনে বললো
আজকের মতো জল স্টোর করে রাখুন।কাল সকালে দেখা যাবে।
শুনেই আমি ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বললাম অদ্ভূত কথা বলছেন তো! আমি এখন অতো বালতি পাবো কোথায়? আপনি দেবেন? সারারাত কি বিনা জলে কাটাবো? খাওয়ার জল অবধি নেই বাড়িতে। আপনি কিছু একটা ব্যবস্থা করুন, দরকার পড়লে প্রোমোটারকে ফোন করুন, কিন্তু আজকেই করতে যা করার করতে হবে, নইলে আমাকে বালতি দিতে হবে। বেচারা সিকিউরিটি টেনশনে, বালতির জন্য। প্রোমোটারকে ফোন করে বিশেষ লাভ হলনা, সে ব্যাটা মহা বদ, পয়সা ছাড়া কিছু বোঝে না। অবশেষে আমিই প্লাম্বারকে ফোন করলাম, তাকে অনুরোধ করেও লাভ হলনা, অতএব তাকে আচ্ছাসে ঝেড়ে ফোনটা রেখে দিলাম। সিকিউরিটি বেচারা কাঁচুমাচু মুখ করে আমাকে বললো দেখছেন তো আপনার কথাই শুনলে না, আমাদের তো পাত্তায় দেয় না।
শুনে বেশ রাগ হলো আমার। ভেবেছে কি আমাকে, চেনে না তো আমি কি জিনিষ। দরকার পরলে জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ সব করতে পারি, তার উপর ইঞ্জিনিয়ার , এক রাতে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে গেলাম তো সামান্য এই পাইপ সমস্যার সমাধান করতে পারবো না? যেমন ভাবা তেমন কাজ, অমনি কাজে লেগে পরলাম।
পাইপের ভাল্ভ বন্ধ করে জলের ফোর্স কমিয়ে খুলে যাওয়া পাইপের অংশটুকু লাগিয়ে কাপড়, দড়ি ইত্যাদি দিয়ে বেশ ভালো করে আটকে সেদিন রাতের মতো ব্যবস্থা হলো। যদি প্লাম্বিং এর জিনিষ পত্র থাকতো তবে ঐ হতচ্ছাড়া প্লাম্বারের অহংকার চূর্ণ করে করে প্লাম্বিংয়ের ব্যবসা খুলতাম। মিস্ত্রী পেশার পর প্লাম্বিং পেশাটাও হাতে রইল। আহা চাকরি বাকরি চলে গেলে করে কম্মে খেতে পারবো।
মাঝেমধ্যে ভাবি আর নিজেই খুশি হয়ে যাই, আমার মধে্য কি অপরিসীম প্রতিভা। শুধু বেলা এগারোটার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারি না তাই, নইলে দেখিয়ে দিতুম আরকি।
প্রতিভার বিচ্ছুরন, একদম পি্রজমের ভিতর আলো যাওয়ার মতো।

No comments:

Post a Comment