Wednesday, 12 August 2015

খুশির ঈদ

ঈদ আসছে। খুশির ঈদ। আমিও খুশি। তবে এখন বড়ো হয়ে গেছি। এখন আগের মতো খুশি হয়না। ইসকুল থেকে আসার সময় যেদিন প্যান্ডেলের প্রথম বাঁশটা দেখতে পেতাম, মনটা আনন্দে ভরে উঠত। লাফাতে লাফাতে বাড়ি আসতাম। প্রথম রোজা যেদিন শুরু হতো সেদিন থেকেই নিউ-য়ের বায়না শুরু হতো। কবে যাব ঈদের বাজার করতে। আম্মু বলতো আজ যাব কাল যাব। তারপর আম্মু একদিন বেরোতো বাজার করতে.. অনেক দোকান ঘুরে সুন্দর অথচ সস্তা জামা কাপড় কিনে বাড়ি ফিরতো। এক-একবার দেরি হয়ে যেতো। পাড়ার মোম্স্ , মিমন, জুঁই দের শপিং শেষ, অথচ আমাদের হয়নি। কি অবস্থা। আসলে আব্বু হয়তো টাকা জোগাড় করতে পারেনি। অন্য সকলের আব্বুর মতো আমার আব্বুর তো চাকরি ছিল না, তাই মাসের শেষে টাকা আসবেই তার গ্যারান্টি ছিলো না। সে কথা তো তখন বুঝতে পারতাম না। টাকা পয়সার টানাটানি হলেও কোনোদিন টের পেতাম না, আব্বু আম্মু কোনোদিন টেরই পেতে দেয়নি। তাই দেরি হলে চিন্তা করতাম এবারে মনে হয় ভালো জামাটা কেনা হবে না, কারন রোজার শেষের দিকে সবার শপিং যখন শেষ, তখন তো ভালো জিনিস টা আর থাকবেই না। কিন্তু দেরি হলেও প্রতিবার পছন্দসই জামাটাই পেতাম। সাথে ম্যাচিং জুতো, ম্যাচিং ক্লীপ। সে কি আনন্দ। বাড়িতে যেই আসতো উৎসাহ ভরে দেখাতাম নতুন কেনা জামা কাপড়। আব্বুআম্মু একটা জামা দিতো আর দাদাভাই একটা। দুটো জামা হতো। যদ্দিন দাদাভাই বেঁচে ছিল ঈদে দুটো করে জামা হতো। ছোটো বেলা থেকেই একটা জিনিস নিয়ে আমার দুঃখ ছিল, আমার চাচা বা কাকু ছিল না। আমার আব্বু একটাই ছেলে। চাচু বা কাকু থাকলে আমাদেরও তিনটে চারটে নূতন জামা হত। আমাদের আশে পাশে সবার চাচা কাকা ছিলো। সবাই ঈদের জামা কাপড় দেখানোর সময় বলতো এটা আমার বড়ো চাচু দিয়েছে, এটা ছোটো চাচু। আর আমাদের তো শুধু আব্বু আছে, তাই অতোগুলো হতো না। আমার মনে হত ইস্ আমার কেন চাচু নেই। অ্যাটলিস্ট একটাও হতো। আমার বড়ো দাদাও নেই যে আমাকে শপিং করাবে, তাই যে বছর আবিদ ভাইয়া আমাকে ঈদের জন্য নূতন জামা কিনে দিয়েছিল লাইফ স্টাইল থেকে আমি প্রচুর খুশি হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল ইস আমারো একটা বড়ো ভাই আছে তবে।
আমরা যখন দুঃখ করতাম আমাদের মোটে একটা জামা। তখন আম্মু আব্বু আমাদের একটাই কথা বলতো, তোমাদের তো একটাও নূতন জামা হচ্ছে। এমন অনেকে আছে যাদের একটাও জামা কাপড় হয়না। তাদের কথা ভেবে কখনো দেখবে। সতি্যই তো! যাদের একটাও জামা হয়না, কত খারাপ লাগে তাদের। তাদেরও তো ইচ্ছে হয় একটা নতুন জামার!
ঈদের সময় আমাদের বাড়ি থেকে কোনদিন কোনো গরীব মানুষকে খালি হাতে ফিরতে দেখিনি, একমাস আগে থেকে লোকজন আসতে থাকে নূতন জামা কাপড়ের আশায়, টাকা পয়সার আশায়। সবাই কিছুনা কিছু পায়।
আব্বু আম্মু কোনোদিন কোনো অবস্থাতেই তাদের খালি হাতে ফেরায়নি, এমনকি আর্থিক সমস্যার দিনেও খালি হাতে কেউ যায়নি। আব্বু আম্মু কিন্তু ঈদে নূতন জামা কাপড় কখনো কিনতো না, মামারা কখনো দিলে আলাদা কথা। এখন তো বড়ো হয়ে গেছি, এখন আর আব্বু আম্মুরা নূতন জামা কিনে দেয় না, এখন আমরা দুই বোনই আম্মু হয়ে গেছি, আমরাই জামা কাপড় কিনে দিই আব্বুআম্মুকে ।
আমরা দুই বোন দুই বোনকে নূতন জামা কিনে দিই। আমরাই আমাদের চাচু, কাকু, ফুফুমনি, বোন, বন্ধু সব।
নিউ আর কচি তোদেরকে আমি অনেক ভালোবাসি। বলতে পারি না। তাই লিখলাম। তোদেরকে অনেক সময় হার্ট করে ফেলি। আসলে যাদের আমরা ভালোবাসি তাদেরকেই সবথেকে দুঃখ দিই।
I Am sorry and I love you!
তোরা ছাড়া কেউ কি আছে আমার? আমরা একে অপরের পরিপূরক, দুঃখ আনন্দের সাথী। আবিদ ভাইয়া তোমাকেও আমি ভীষণ ভালোবাসি, তুমি কি জানো তুমি আমার দেখা সেরা পে্রমিক।
এই ঈদে আমরা সবাই আনন্দ করবো সব খারাপ লাগা ভুলে।
সবাই ভালো থাকুক, সাথে আমরাও।
কচি কচি সব মন ঈদে একটা হলেও যেন নূতন জামা পায়। হে আল্লাহ্পাক , আমি নামাজ, রোজা করিনা কিন্তু তোমাকে বিশ্বাস করি, আর বিশ্বাস রাখি মানুষের উপর। আমরা কি পারি না প্রতে্যকে একজন করে হলেও যেন একটা শিশু, গরীব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে? নিশ্চয়ই পারি।
সবাই খুশি থাকুক আর আনন্দে থাকুক।
ঈদ আসছে। আর সাতটা দিন বাকি।
লাচ্ছা, সিমাই, ফিরনি, বিরিয়ানি, নতুন জামা, আতরের গন্ধে ম ম খুশির ঈদ।

No comments:

Post a Comment