Monday, 28 September 2015

সেই শ্রাবণ দিনে

আকাশ এখনো পুরোপুরি পরিস্কার হয়নি, তার উপর শ্রাবণের মেঘের ঘনঘটা। রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারপোটর্ের ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের কাছে একটা চেয়ারে বসে আছে দিওতিমা। পরণে লাল পালাজো প্যান্ট আর টপ, চুলটা খোলা, হাতে একটা ফার্স্টট্রাকের রিষ্ট ওয়াচ। সারা মুখে রাত জাগার ক্লান্তি। এখন ভোর সাড়ে চারটে বাজে প্রায়। আকাশের মুখ ভার, এখনো বেশ অন্ধকার। ডোমেস্টিক টার্মিনালের কাছে লম্বা লাইন। ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের দিকটা প্রায় জনশূন্য। কিছুটা দূরের চেয়ারে দুজন লোক বসে আছে, মাঝেমধ্যেই দিওতিমাকে লক্ষ্য করছে। এই মূহুতের্ দিওতিমার খুব কান্না পাচ্ছে। ঋককে অনেকক্ষন ধরে ফোন করছে দিওতিমা, কিছুতেই ফোন ওঠাচ্ছে না। মেসেজ করার চেষ্টা করেছে বেশ কয়েকবার, কিন্তু কোনো কারনে মেসেজ ডেলিভার হচ্ছে না। দিওতিমা হোয়াট্স অ্যাপ করে জানিয়ে দিয়েছে এয়ারপোটর্ আসার কথা। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো দিওতিমা,প্রায় তিরিশ বার কল করেছে সে, কিন্তু ফোন কেন ওঠাচ্ছে না ঋক!
আটটার সময় হংকং যাওয়ার ফ্লাইট ঋকের,সেটা যদি হয় এতক্ষনে বাড়ি থেকে এয়ারপোটর্ের উদ্দেশে্য বেরিয়ে যাওয়ার কথা। ফোনটা না তোলার তো কারণ নেই ওর। তবে কি ইচ্ছে করে ফোন তুলছে না ঋক? নাকি ও হংকং যাচ্ছে না? তাই যদি হয় এতো বড়ো মিথ্যেটা বলতে পারল ঋক? মিথ্যে তো কম কিছু বলে না সে দিওতিমাকে।
কাল রাতের ঝামেলার পর থেকেই ফোন তুলছে না ঋক। এয়ারপোটর্ে আসার কথা বলে উঠতে পারেনি দিওতিমা, ভেবেছিল সারপ্রাইজ দেবে। এখন নিজেই সারপ্রাইজড্ হয়ে যাচ্ছে।
কি করবে বুঝতে পারছে না, বাড়ি চলে যাবে নাকি অপেক্ষা করবে কিছুক্ষন আরো। ভাবতে ভাবতেই হোয়াট্সঅ্যাপে ঋকের মেসেজ ভেসে উঠলো , তুমি বাড়ি চলে যাও, আমি তোমাকে পরে সময় পেলে ফোন করবো।
টপটপ করে চোখের জলের বড়ো বড়ো ফোঁটা ঝরে পড়ছে ফোনের স্ক্রীনের উপর। মাথা নিচু করে বসে আছে দিওতিমা, অঝোর ধারায় স্নাত।
পাঁচটা বেজে গেছে। আকাশের ঘন কালো মেঘ ভোরের আলোকে আটকে রেখেছে। মেঘলা মন খারাপ করা অন্ধকার। কয়েকটা কাক, শালিখ নিজেদের মধে্য ঝগড়া করছে, ঝগড়া করতে করতে মারপিট করতে শুরু করলো, অন্য সময় হলে দিওতিমা ব্যাপারটা এনজয় করতো । কিন্তু এখন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে সে , নিজেকে সামলানোর মতো কঠিন কাজ বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই। পেটে হাল্কা চিনচিনে ব্যথা করছে, কাল রাতের ডিনারের পর আর কিছু খায়নি তাই মনে হয়।
কি করবে দিওতিমা? নিজেকে যেচে অপমানিত করার জন্য দিওতিমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজেরই উপর। একা মেয়ের প্রতি চারপাশের লোকজনদের প্রচুর কৌতূহল। দিওতিমার দিকেই সবার লক্ষ্য। একটা একটা করে অজস্র্র গাড়ি ঢুকছে, কিন্তু ঋকের কালো গাড়িটার কোনো দেখা নেই।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পাঁচটা চল্লিশ বেজে গেছে। দেড় ঘন্টা বসে আছে সে।
নাহ! আজ আর বোধহয় ঋক আসবে না। আবার দিওতিমাকে মিথ্যে বলেছে নিশ্চয়ই। শরীর খারাপ লাগছে খুব, বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই ঋকের কালো গাড়িটা চোখে পড়লো।
অপেক্ষারত দিওতিমাকে চোখে পড়তে অবশ্য দেরি হয়নি ঋকের। গাড়ি থেকে নেমে দিওতিমার দিকে আসছে। এসেছো কেন? কি দরকার ছিল আসার?
সতি্যই তো কেন এসেছে দিওতিমা. একটা কঠিন হৃদয় মানুষের কাছে এর থেকে বেশি কি আশা করা যায়!! কান্না চাপা গলায় বলে উঠলো তোমার সাথে দেখা করতে ঋক, দুঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছি। অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, ফোন , হোয়াটস্ অ্যাপ, মেসেজ, ঋক তুমি উত্তর কেন দিচ্ছিলে না?
অধৈর্য্য মুখে ঋক বলে উঠল আমি কি তোমায় আসতে বলেছিলাম? দেখো দিয়া, আমার হাতে সময় বেশি নেই, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
কিছু বলার নেই ঋক, তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, ভেবেছিলাম তোমার ভালো লাগবে, তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তুমি যাও, তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
চেকিং এর স্বয়ংস্ক্রীয় কাঁচের দরজাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঋক চলে যাচ্ছে, দিওতিমা তাকিয়ে আছে। ঋকের কাছে পিছনের দিকে তাকানোর মতো কিছুই নেই। শেষ বারের মতো তাকালো দিওতিমা।
একরাশ মন খারাপ নিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধে্য ফুটপাথ ধরে হাঁটছে দিওতিমা, এই বৃষ্টির একটা সুন্দর ইংরেজি নাম আছে, ডি্রজলিং। রাস্তার ধারে যত্ন করে লাগানো পাতাবাহার গাছের ঝোপে অযত্নে বেড়ে ওঠা নাম না জানা গাছে কমলা হলুদ ফুল ফুটেছে। কি অদ্ভূত ব্যাপার, ভালোবাসা ছাড়াই যত্ন করে কমলা হলুদ সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে।
শ্রাবণের ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির দমক বাড়ছে, ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে দিওতিমা ... চোখের জল আর বৃষ্টির জলে।

প্রস্ফুটিত গোলাপ

কতদিন পরে আমার পুরো নাম মানে পিতৃদত্ত নাম টা ব্যবহার করলাম। সেই কবে প্রতিযোগীতা গুলোতে পুরো নাম লিখতাম, কাজী ফারহা ইয়াসমিন।
যখন পুরস্কারের জন্য পুরো নাম ঘোষিত হতো, কি ভালোই না লাগতো। আমিই তারপর নামটা কাটাছেঁড়া করে কখনো ফারহা ইয়াসমিন কখনো বা ফারহা কাজী লিখতে শুরু করি। কিন্তু আমার পুরো নাম ছাড়া আমি যে ভীষন ভাবে অপূর্ণ আজকেই হঠাৎ মনে হল। মেয়েরা বড়ো হয়ে গেলে বোধহয় বাবা দেওয়া সব কিছুর প্রতিই ভীষণ ভাবে টান অনুভব করে। আসলে একসময় তাকে সব ছেড়ে চলে যেতে হয় বলেই হয়তো এই রকম মনে হয়। আমার ক্ষেত্রে নাম তো পরিবর্তন হওয়ার ছিলো না, আমিই স্বইচ্ছায় ইসকুল জীবনে ত্যাগ করেছিলাম পিতৃদত্ত পদবী। এখন হঠাৎই নিজের মন খারাপ লাগছে। আমার নামটা আম্মুর দেওয়া আর আমার নামটা আমার ভীষন পি্রয় ।
ফারহা ইয়াসমিন -- প্রস্ফুটিত গোলাপ।

ভারতের উন্নতি এবার ঠেকায় কে?

একটা জিনিস মোটামুটি প্রমানিত , আমরা মানে ভারতীয়দের দেশপে্রমের চুলকানি বাড়ে একমাত্র পাকিস্তানের প্রসঙ্গে। কি ভাগ্যিস পাকিস্তান ছিল, নইলে এত দেশপে্রমীদের খুঁজে পাওয়ায় যেতো না। একটা ধন্যবাদ তো এই জন্য অবশ্যই প্রাপ্য পাকিস্তানের। এদের অবশ্য দেশের সমস্যা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত হতে দেখা যায় না। যেমন ধরো, সম্প্রতি কালের শ্রমিক বিল নিয়ে কেউ চিন্তিতই নয়, আরে ধুর ঐসব ছোটোলোক নোংরা লোকেদের নিয়ে কে ভাবে? কি হবে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক below poverty line এর নিচে আছে ভেবে? কি হবে এটা ভেবে যে টাকার দাম কমছে। অথবা 40% মানুষের বাড়িতে শৌচাগার নেই। শালা , এসব নিয়ে কোন গাধা ভাবে বা জানার চেষ্টা করে? তার থেকে অনেক বেশি দরকারি পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা উগরিয়ে নিজেকে মহান দেশপে্রমী প্রমাণ করা। আমি আবার খুব একটা দেশপে্রমী নই, আমার কাছে পাকিস্তানের থেকেও ঢের বেশী ঘৃণার পাত্র বি্রটেন, যে আমাদের দেশটাতে সাম্প্রদায়িকতার বীজ পুঁতে দিয়ে গেছে, আমি ঢের বেশি ঘৃণা করি আমেরিকাকে যে কিনা নিজের দেশের অর্থনীতি মজবুত করার জন্য দেশ গুলোর মধে্য যুদ্ধ লাগায়। দেশ ভাগের পরেই সব বেইমানগুলো পাকিস্তান আর বাংলাদেশ চলে গেছিল, এখন তো আবার মোদির আচ্ছে দিন এসে গেছে, কৃষক আত্মহত্যার থেকে অনেক বেশি দরকারি কার্গিল যুদ্ধের বিজয়দিবস পালন। জনসংখ্যা গণনা হচ্ছে ধর্মের উপর ভিত্তি করে, তখন আবার এই দেশপে্রমীদের বক্তব্য বির্তকিত বিষয় নিয়ে আলোচনা বাপু পোষায় না। আমার ভারতের উন্নতি এবার ঠেকায় কে?

টক ও না , ঝাল ও না

জাম্বুরা বলে একটা ফল হয়, কেউ কি সেটা জানো? এটা আসলে আমাদের খুব একটা চেনা ফল। এটাকে আমরা সবাই বাতাবি লেবু বলেই চিনি। বাংলাদেশের মানুষরা বাতাবি লেবুকে জাম্বুরা ফল বলে। গোলাপি রঙের টক মিষ্টি ফলটি গোলমরিচ, বিটনুন, লবণ , মরিচ, ধনেপাতা সহযোগে খেতে অসাধারণ।
স্থান কাল বিশেষে ভাষার তারতম্য বাংলার জেলায় জেলায় দেখা যায়। যেমন ধরো বর্ধমান, বাঁকুড়ার গ্রাম গুলোতে পেয়ারাকে আঞ্জির বলে। আবার বীরভূমে এই পেয়ারাকেই আমসুপুরি বলে। আমার মামার বাড়ি বাঁকুড়াতে বেদানাকে ডালিম বলা হয়। এই ডালিম কথাটা শুনলেই আমার একটা ছোটোবেলায় পড়া রূপকথায় পড়া রাজকুমারের কথা মনে পড়ে । সেই যে ছিল না? একটা রাজপুত্র জন্মালো রানীর কোল আলো করে। ডালিম ফুলের মতো তার গায়ের রং। ডাইনির অভিশাপে দিনের বেলা ডালিম ফুল হয়ে যায় সে , আর রাতের বেলা মানব শিশু। ছোটোবেলায় আমি ভাবতাম আমিও বোধহয় কোনো রাজকুমারী। এত্তো মিষ্টি একটা মেয়ে রাজকুমারী না হয়ে যায়ই না। 
কিন্তু পরে রিয়ালাইজ করলাম আমি রাজকুমারী বটে, তবে মিষ্টি মোটেই নয়। সাংঘাতিক টক ঝাল ।

এ কোন স্বাধীনতা?

আনন্দবাজারে প্রকাশিত "রিফিউজি" নামে লেখাতে একজন না বাংলাদেশী না ভারতীয় বাঙালির আক্ষেপ
'কী একটা দেশভাগ হল! বলতেন, দেখ, আমি আমার জন্মভূমিকে ভারত, পূর্ব পাকিস্তান আর বাংলাদেশ— এই তিনটে নামে দেখলাম।'
কষ্ট হল। দেশভাগটার সত্যিই কি খুব দরকার ছিল? আমার নানাভাই, নানিজান এবং অজস্র আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে পাসপোর্ট লাগবে কেন? কেন ওপার বাংলার অজস্র লোকের জন্মভূমি ভারত হওয়া সত্বেও এবং এপার বাংলার অগুনতি লোকের জন্মভূমি পূর্ব বাংলা হওয়া সত্বেও নিজ জন্মভূমিতে নিজের ইচ্ছেমত পা রাখতে পারবে না?
জন্মভূমির টান কি অগ্রাহ্য করা যায়? বোধহয় কখনোই নয়, নইলে আশি বর্ষীয়া আমার আম্মুর ফুফুমনি আমার নানিজান কেন কাঁদেন ভারতে আসার জন্য? একটাই কারন , সেটা হল
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী।
কষ্ট হয়। এই অদ্ভূত স্বাধীনতা বোধহয় কেউ চায়নি। এই কষ্ট মেটবার নয় বোধহয়। একটা জাতিকে ভেঙে দুটুকরো করে মেরুদন্ডটাই ভেঙে দেওয়া কোন স্বাধীনতা?

মন ভালো করা মূহুর্তরা হঠাৎ করেই আসে

অফিস যেতে বরাবরই আমাকে অনেক এনার্জি খরচ করতে হয়। সকালে কোনোদিনই উঠতে পারি না আমি, বেলা এগারটা বারোটায় উঠে আমি মনকে প্রস্তুত করতে থাকি অফিস যাওয়ার জন্য। এখনতো বড়ো হয়ে গেছি আমি (যদিও সবাই বলে বয়সটাই বেড়েছে শুধু, মনের দিক থেকে সেই পুঁচকি পিউ টাই আছে। আরে আফটার অল বয়স শুধু সংখ্যা মাত্র , মনটা সজীব রাখা খুব দরকার জীবনে। নইলে পাখি , ফুল এমনি রাস্তার কুকুরটা দেখেও আনন্দ কে পাবে বলোতো? ) তাই কেউ বলার নেই, পিউমনি গো উঠে পর মা, ইসকুল আছে। তাই নিজে নিজেই উঠে পড়ি আমি। তাপ্পর নিজেই নিজেকে বলি....... পিউমনি উঠে পড়। অফিস যেতে হবে।
না .... আর একটু ঘুমাই.... প্লীজ।
এরপর কিন্তু দেরী হয়ে যাবে আর তখন কিন্তু কেউ বাঁচাতে পারবে না তোমায়।
অনেক কষ্টে চোখ মেলে উঠে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হতে থাকি আমি । এটাই আমার দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবন।
আজকেও কষ্ট করে উঠে অফিস রওনা দিলাম। মনটা আজকে বেশ খারাপ। আসলেই ভীষণ রকম খারাপ।

জীবনে যত মনখারাপ কাছের মানুষের কাছেই তুমি পাবে। যতই ভালবাসো, একসময় না একসময় দুঃখ পাবেই। এটাই জগতের নিয়ম। আসলে কাছের মানুষগুলোর কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে আমাদের। আর সেটা পূর্ণ করা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটা প্রতিটা মানুষের জন্য প্রযোজ্য । যখন তুমি সেই কাছের মানুষগুলো থেকে একদিন দূরে চলে যাবে , তখন তোমার মনে পরবে এক একটা মূহুর্ত। তখন তুমিও কষ্ট পাবে। জীবন এই ভাবেই সব কিছুর হিসেব রাখে।
বাসে বেশ ভীড় ছিল । খানিক পরে বসতে জায়গা পেয়ে মোবাইলটা বের করে ফেসবুকটা খুলে দেখছি । আমি খুব বেশি ফোন অ্যাডিক্টেড। চেষ্টা করেও দূরে থাকতে পারিনা। জানি পারবো না, তবু মাঝেমধ্যেই চেষ্টা করি । খানিকক্ষণ পরে আমার মনে হল কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। অতি চেনা কোনো অনুভূতি।
মেয়েরা অনেক অদ্ভূত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। প্রকৃতি তাদের এই ক্ষমতাগুলো দিয়েছে অবস্হার মোকাবিলা করার জন্য। কেউ কখনো তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে মেয়েরা ঠিকক বুঝতে পারে।
তাকিয়ে দেখলাম একটা বেশ সুন্দর দেখতে ছেলে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। বেশ অহঙ্কারের সাথে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ।
অদ্ভূত ক্ষমতাগুলির মধ্যে একটি হল মেয়েরা চট করে কোনো ব্যাপার থেকো নিজের মনকে ডাইভার্ট করতে পারে না।
ব্যাস! আরকি। আমিও লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে শুরু করলাম ছেলেটাকে। এটাকেই কি ঝারি মারা বলে? কে জানে!!
যখনই তাকিয়ে দেখি, ছেলেটা আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
আজব সমস্যা।
তারপর আমি একটু রেগেই ভীষণ কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে।
ওমা, দেখি সেও ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে।
ভীষণ ভীষণ রাগ হল। আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকানো!! এত্তো সাহস?
দিলাম বেশ করে ভেংচি কেটে। আহা কতদিন ভেংচি কাটি না। ভারি আনন্দ হল। ছেলেটা কিন্তু মহা টেঁটিয়া। সেই তাকিয়েই থাকল আমার দিকে। আমিও আড়চোখে দেখতে থাকলাম। বাসে আরতির গান বাজছিল। একসময় বেজে উঠল 'চোখে চোখে কথা বলো , মুখে কিছু বলো না'।
আমি আর থাকতে পারলাম না, হেসেই ফেল্লাম। আমাকে হাসতে দেখে ছেলেটা বেশ ঘাবড়ে কাঁচুমাচু মুখ করে তাকাচ্ছে। নারকেল বাগান আসতেই ছেলেটা নেমে গেল।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি।মন বলছে ১০০ পার্সেন্ট ছেলেটা একবার পিছন ঘুরে তাকাবেই।
শাহরুখ খানের মুভির সেই দৃশ্যের মতো 'পালাট, পালাট '। একটু এগিয়ে যাওয়ার পর ছেলেটা পিছনে ঘুরে তাকালো। এবার আমি হাসলাম... রাগ করে নয়। মন থেকে হাসি। আমার মন ভালো করার জন্য এটুকু তো অবশ্যই প্রাপ্য।
বাইরে তখন মেঘের ফাঁকে রোদ হাসছে , আমার মতোই।