আকাশ এখনো পুরোপুরি পরিস্কার হয়নি, তার উপর শ্রাবণের মেঘের ঘনঘটা। রাত
থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারপোটর্ের ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের কাছে একটা
চেয়ারে বসে আছে দিওতিমা। পরণে লাল পালাজো প্যান্ট আর টপ, চুলটা খোলা, হাতে
একটা ফার্স্টট্রাকের রিষ্ট ওয়াচ। সারা মুখে রাত জাগার ক্লান্তি। এখন ভোর
সাড়ে চারটে বাজে প্রায়। আকাশের মুখ ভার, এখনো বেশ অন্ধকার। ডোমেস্টিক
টার্মিনালের কাছে লম্বা লাইন। ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের দিকটা প্রায়
জনশূন্য। কিছুটা দূরের চেয়ারে দুজন লোক বসে আছে, মাঝেমধ্যেই দিওতিমাকে
লক্ষ্য করছে। এই মূহুতের্ দিওতিমার খুব কান্না পাচ্ছে। ঋককে অনেকক্ষন ধরে
ফোন করছে দিওতিমা, কিছুতেই ফোন ওঠাচ্ছে না। মেসেজ করার চেষ্টা করেছে বেশ
কয়েকবার, কিন্তু কোনো কারনে মেসেজ ডেলিভার হচ্ছে না। দিওতিমা হোয়াট্স অ্যাপ
করে জানিয়ে দিয়েছে এয়ারপোটর্ আসার কথা। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো
দিওতিমা,প্রায় তিরিশ বার কল করেছে সে, কিন্তু ফোন কেন ওঠাচ্ছে না ঋক!
আটটার সময় হংকং যাওয়ার ফ্লাইট ঋকের,সেটা যদি হয় এতক্ষনে বাড়ি থেকে
এয়ারপোটর্ের উদ্দেশে্য বেরিয়ে যাওয়ার কথা। ফোনটা না তোলার তো কারণ নেই ওর।
তবে কি ইচ্ছে করে ফোন তুলছে না ঋক? নাকি ও হংকং যাচ্ছে না? তাই যদি হয় এতো
বড়ো মিথ্যেটা বলতে পারল ঋক? মিথ্যে তো কম কিছু বলে না সে দিওতিমাকে।
কাল রাতের ঝামেলার পর থেকেই ফোন তুলছে না ঋক। এয়ারপোটর্ে আসার কথা বলে উঠতে
পারেনি দিওতিমা, ভেবেছিল সারপ্রাইজ দেবে। এখন নিজেই সারপ্রাইজড্ হয়ে
যাচ্ছে।
কি করবে বুঝতে পারছে না, বাড়ি চলে যাবে নাকি অপেক্ষা করবে
কিছুক্ষন আরো। ভাবতে ভাবতেই হোয়াট্সঅ্যাপে ঋকের মেসেজ ভেসে উঠলো , তুমি
বাড়ি চলে যাও, আমি তোমাকে পরে সময় পেলে ফোন করবো।
টপটপ করে চোখের জলের বড়ো বড়ো ফোঁটা ঝরে পড়ছে ফোনের স্ক্রীনের উপর। মাথা নিচু করে বসে আছে দিওতিমা, অঝোর ধারায় স্নাত।
পাঁচটা বেজে গেছে। আকাশের ঘন কালো মেঘ ভোরের আলোকে আটকে রেখেছে। মেঘলা মন
খারাপ করা অন্ধকার। কয়েকটা কাক, শালিখ নিজেদের মধে্য ঝগড়া করছে, ঝগড়া
করতে করতে মারপিট করতে শুরু করলো, অন্য সময় হলে দিওতিমা ব্যাপারটা এনজয়
করতো । কিন্তু এখন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে সে , নিজেকে সামলানোর মতো
কঠিন কাজ বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই। পেটে হাল্কা চিনচিনে ব্যথা করছে, কাল
রাতের ডিনারের পর আর কিছু খায়নি তাই মনে হয়।
কি করবে দিওতিমা? নিজেকে
যেচে অপমানিত করার জন্য দিওতিমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজেরই উপর। একা মেয়ের
প্রতি চারপাশের লোকজনদের প্রচুর কৌতূহল। দিওতিমার দিকেই সবার লক্ষ্য। একটা
একটা করে অজস্র্র গাড়ি ঢুকছে, কিন্তু ঋকের কালো গাড়িটার কোনো দেখা নেই।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পাঁচটা চল্লিশ বেজে গেছে। দেড় ঘন্টা বসে আছে সে।
নাহ! আজ আর বোধহয় ঋক আসবে না। আবার দিওতিমাকে মিথ্যে বলেছে নিশ্চয়ই। শরীর
খারাপ লাগছে খুব, বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই ঋকের কালো গাড়িটা চোখে
পড়লো।
অপেক্ষারত দিওতিমাকে চোখে পড়তে অবশ্য দেরি হয়নি ঋকের। গাড়ি থেকে নেমে দিওতিমার দিকে আসছে। এসেছো কেন? কি দরকার ছিল আসার?
সতি্যই তো কেন এসেছে দিওতিমা. একটা কঠিন হৃদয় মানুষের কাছে এর থেকে বেশি
কি আশা করা যায়!! কান্না চাপা গলায় বলে উঠলো তোমার সাথে দেখা করতে ঋক,
দুঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছি। অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, ফোন ,
হোয়াটস্ অ্যাপ, মেসেজ, ঋক তুমি উত্তর কেন দিচ্ছিলে না?
অধৈর্য্য মুখে ঋক বলে উঠল আমি কি তোমায় আসতে বলেছিলাম? দেখো দিয়া, আমার হাতে সময় বেশি নেই, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
কিছু বলার নেই ঋক, তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, ভেবেছিলাম তোমার ভালো
লাগবে, তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তুমি যাও, তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
চেকিং এর স্বয়ংস্ক্রীয় কাঁচের দরজাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঋক চলে যাচ্ছে,
দিওতিমা তাকিয়ে আছে। ঋকের কাছে পিছনের দিকে তাকানোর মতো কিছুই নেই। শেষ
বারের মতো তাকালো দিওতিমা।
একরাশ মন খারাপ নিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধে্য
ফুটপাথ ধরে হাঁটছে দিওতিমা, এই বৃষ্টির একটা সুন্দর ইংরেজি নাম আছে,
ডি্রজলিং। রাস্তার ধারে যত্ন করে লাগানো পাতাবাহার গাছের ঝোপে অযত্নে বেড়ে
ওঠা নাম না জানা গাছে কমলা হলুদ ফুল ফুটেছে। কি অদ্ভূত ব্যাপার, ভালোবাসা
ছাড়াই যত্ন করে কমলা হলুদ সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে।
শ্রাবণের ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির দমক বাড়ছে, ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে দিওতিমা ... চোখের জল আর বৃষ্টির জলে।
মনের দুঃখ আর পরিবেশের মৃদ্যু হাসি মিলেমিশে একাকার,যা উপভোগ যোগ্য
ReplyDeleteঅসাধারণ...
ReplyDeleteঅসাধারণ...
ReplyDelete