বাসের জন্য অপেক্ষা করছি... বেলা গড়িয়ে বিকেল হলেও গরম কমছে না। আমি সাদা
রঙের কালো ফুটিফুটি দেওয়া একটা জামা পরেছি। অনেকেই বলেছে এই জামাটা পড়লেই
আমাকে নাকি পুরানো দিনের হিরোইন লাগে...! বেশ মজা লাগে শুনতে... ছোটো বেলায়
একটা পুরোনো হিন্দি সিনেমায় দেখেছিলাম প্রায় এই রকম একটা জামা পরে হিরোইন
টেনিস খেলছে। আর আশ্চর্যের কথা এই জামাটা পরলেই আমার ঐ সিনটার কথা মনে পড়ে
, আর ভীষণ টেনিস খেলতে ইচ্ছে করে। আমি একটু পাগল টাইপের আছি। ভীষণ রকম
অদ্ভুত ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে। একবার ইচ্ছে হয়েছিল মুরগি পোষার।
তো বাড়িতে মুরগি এলো , তিন ভাইবোনের তিনটে মুরগির বাচ্চা। আমার টা কালো,
নিউয়েরটা সাদার উপর কালো ফুটকিওয়ালা, আর কচির টা হলুদ রঙের। শহরে তো আর
গ্রামের মতো ফাঁকা জায়গা নেই মুরগি পোষার জন্য তাই আব্বু আবার তিন হাজার
টাকা খরচা করে একটা বিশাল খাঁচা কিনে দিল, তাতে অন্তত পঞ্চাশটা মুরগি ধরে।
আম্মু দেখে বেজায় খেপে গেলো। তিনটে মুরগির জন্য এত বড়ো খাঁচা! আমার
আম্মুর ধারণা আব্বুকে সবাই ঠকিয়ে দেয় কারণ আব্বু নাকি খুব বোকা। কোনো এক
অদ্ভুত কারণে স্ত্রীর কাছে স্বামী সবসময়ই বোকা!
সে যাইহোক মুরগির
বাচ্চারা বড়ো হতেই পাঁচিলের উপরেই ইন্টারেস্ট দেখায় বেশি, অতো বড়ো খাঁচায়
তাদের মন টেঁকে না কিছুতেই। সবাই সকাল হলেই পাঁচিলে উঠে পায়রাদের সাথে লাইন
করে বসে থাকে। সারাদিন খায় দায় আর পাঁচিলে উঠে বসে থাকে। মুরগির
বাচ্চাগুলো বড়ো হতেই তাদের লম্বা ঝুঁটি আর লম্বা লম্বা ঠ্যাং হয়ে গেল।
আম্মু মুরগীর বাচ্চাগুলোর গঠন আর স্বভাব দেখে শুনে ডিক্লেয়ার করলো ওগুলো
কোনোভাবেই মুরগি নয়, সব কটা মোরগ। শুধু কচির মুরগি বাচ্চাটা মুরগি হলেও হতে
পারে। শুনে আমাদের হেবি দুঃখু। ডিম খাওয়ার ইচ্ছে সওওব মাটি। মোরগ হলেই
কেটে কুটে খাওয়ার চান্স বেশি। খুব চিন্তায়, আম্মুর মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে
না মোরগ গুলো কে বেশি দিন খাইয়ে দাইয়ে রেখে দেবে। যাই হোক এমনি করতে করতেই
একদিন কচির মুরগি ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, ঐ দিন কচি দেশি মুরগির ডিম খেল
ভাতের সাথে। আমি আর নিউ বসে বসে দেখলাম দুঃখ দুঃখ মুখ করে। ইসকুল থেকে এসেই
আম্মুকে জিজ্ঞাসা করি আমাদের মুরগি ডিম পাড়লো কিনা, অবশেষে একদিন আমাদের
দুজনের মুরগিই ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, খুব মজা।
সে তো গেলো ইচ্ছের কথা।
তা যেটা বলছিলাম বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। বাস আসতে এখনো দেরি আছে।
মন্দিরের মার্বেল বাঁধানো চাতালে বসে আছি, ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। দুটো
শালিখ পে্রম করছে, একজন ঠোঁট দিয়ে আর একজনের মাথা চুলকে দিচ্ছে।
হঠাৎ একটা লোকের দিকে চোখ আটকে গেল। লোকটা আইসক্রিম খাচ্ছে, আইসক্রিমটার রংটা খুব সুন্দর... আকাশনীল রংয়ের!
দেখেই খুব ভালো লাগল, ইচ্ছে করলেই কিনে খাওয়া যেতো, কিন্তু ইচ্ছেটাই হচ্ছে
না। লোকটার আইসক্রিম খাওয়া দেখছি হাঁ করে, লোকটা ভাবছে হয়তো " কি হ্যাংলা
মেয়েরে বাবা।" আমার কখনও কোনো জিনিস ভালো লাগলে সেটা তখনি কিনি না, তাতে
ভালো লাগাটাই নষ্ট হয়ে যায়, রেখে দিই পরে কখনও কিনবো বলে। ছোট্ট বেলায় একটা
পুতুল খুব ভালো লেগেছিলো, অনেক দাম ছিল তাই আর কেনা হয়নি। এখনো দোকানটার
সামনে গেলে দাঁড়িয়ে দেখি পুতুলটাকে। আমার মেয়েকে কিনে দেবো হয়তো কখনো।
আজকে আইসক্রিমটা কিনবো না, ভাল লাগা মুগ্ধতাটা জিইয়ে রাখব। অন্য হঠাৎ
একদিন এমনি সুন্দর বিকেলে আকাশনীল আইসক্রিমটা কিনব, হয়তোবা তখন মেঘ জমবে
আকাশে, কে জানে হয়তো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়বে। একটা মেয়ে আকাশনীল আইসক্রিম
খেতে খেতে হারিয়ে যাবে ভীড়ের মাঝে।
Friday, 12 June 2015
Monday, 8 June 2015
বৃষ্টিবিলাস৩
ওগো নির্জনে বকুল শাখায়, দোলায় কে আজি দুলিছে ,দোদুল দুলিছে।।
ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল, আঁচল আকাশে হতেছে আকুল।
ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল, আঁচল আকাশে হতেছে আকুল।
বৃষ্টির সাথে আমার জন্মান্তরের সম্পকর্...২২শে শ্রাবণের বষর্াঘন রাতে
জীবনের প্রথম অনুভূতি...আমার জন্মদিনের দিন সবর্দা ঝিমঝিমে বৃষ্টি..
বৃষ্টিহীন জন্মদিন ভাবতেও পারিনা।
আর বষর্া মানেই বকুল ফুল..আমার খুব প্রিয় একটা ফুল.. আমাদের ইসকুলের ছোটো গেটের সামনে একটা বকুল গাছ আছে..তলাটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো...লাল রঙের করমচার মতো ছোট ছোট ফল তার.. যখন ইসকুলে পড়তাম তখন জানতাম না ওটা বকুল গাছ...
বকুল ফুলের সাথে আমার প্রথম পরিচয় রবি ঠাকুরের হাত ধরে... তারপর আম্মুর কাছে শুনি বকুলফুলের মালার কথা...
কলেজ থেকে ফিরছি...ডানকুনি স্টেশনে অপেক্ষা করছি বধর্মানের ট্রেনের জন্য..বষর্াকাল...এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই...একটা গাছের তলায় বসে আছি..টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে ছোট্ট ছোট্ট বকুলফুল...অদ্ভূত সুন্দর পাগল করা গন্ধ.. মনে হচ্ছে অনন্তকাল বসে থাকি...
এতো স্মৃতি, সুন্দর মুহুর্ত আছে বৃষ্টিকে নিয়ে..অথচ বৃষ্টির সাথে আমার আর রামগড়ুরের ছানার কোনো মুহুর্ত নেই...দুয়োরাণী হয়েই রয়ে গেলাম...
কখনো এক বষর্ার সময় ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে দুজনে হাত ধরে...বৄষ্টিস্নাত রাস্তায়... সবুজ বনবীথি.. মাতাল হাওয়ায় উড়ছে শাড়ির আঁচল...
বৃষ্টি... বৃষ্টি... পাগল প্রকৃতি...নরম ঠোঁটের স্পশর্..
বকুল ঝরছে.. ভিজে মাটির নেশাময় সুবাস..
একরাশ বৃষ্টি আমি...অঝোর ধারা..
কানে কানে বলছি...বৃষ্টি বলে ডেকো আমায়...
সুয়োরাণী দুয়োরাণী মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পরশে.. হারানো রুপকথারা একে একে আসছে ফিরে..
বাতাসে শব্দের প্রতিধ্বনি.. বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়....বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...
আর বষর্া মানেই বকুল ফুল..আমার খুব প্রিয় একটা ফুল.. আমাদের ইসকুলের ছোটো গেটের সামনে একটা বকুল গাছ আছে..তলাটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো...লাল রঙের করমচার মতো ছোট ছোট ফল তার.. যখন ইসকুলে পড়তাম তখন জানতাম না ওটা বকুল গাছ...
বকুল ফুলের সাথে আমার প্রথম পরিচয় রবি ঠাকুরের হাত ধরে... তারপর আম্মুর কাছে শুনি বকুলফুলের মালার কথা...
কলেজ থেকে ফিরছি...ডানকুনি স্টেশনে অপেক্ষা করছি বধর্মানের ট্রেনের জন্য..বষর্াকাল...এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই...একটা গাছের তলায় বসে আছি..টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে ছোট্ট ছোট্ট বকুলফুল...অদ্ভূত সুন্দর পাগল করা গন্ধ.. মনে হচ্ছে অনন্তকাল বসে থাকি...
এতো স্মৃতি, সুন্দর মুহুর্ত আছে বৃষ্টিকে নিয়ে..অথচ বৃষ্টির সাথে আমার আর রামগড়ুরের ছানার কোনো মুহুর্ত নেই...দুয়োরাণী হয়েই রয়ে গেলাম...
কখনো এক বষর্ার সময় ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে দুজনে হাত ধরে...বৄষ্টিস্নাত রাস্তায়... সবুজ বনবীথি.. মাতাল হাওয়ায় উড়ছে শাড়ির আঁচল...
বৃষ্টি... বৃষ্টি... পাগল প্রকৃতি...নরম ঠোঁটের স্পশর্..
বকুল ঝরছে.. ভিজে মাটির নেশাময় সুবাস..
একরাশ বৃষ্টি আমি...অঝোর ধারা..
কানে কানে বলছি...বৃষ্টি বলে ডেকো আমায়...
সুয়োরাণী দুয়োরাণী মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পরশে.. হারানো রুপকথারা একে একে আসছে ফিরে..
বাতাসে শব্দের প্রতিধ্বনি.. বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়....বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...
বৃষ্টিবিলাস২
একদিন এক মেঘবালিকা বললো এসে কৌতূহলে
অ্যায় মেয়েটা নাম কিরে তোর?
ছোট্ট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম মেঘ হবো,উড়ে বেড়াব দেশেবিদেশে! সাদা..সোনালি..গোলাপী মেঘের দল..
এখনো দেখি স্বপ্ন, তবে বৃষ্টি হওয়ার...একরাশ অভিমান হয়ে ঝরে পড়বো রামগড়ুরের ছানার উপর!
গরমের ছুটি মানেই ছিলো ভারি মজা, মামার বাড়ি যাওয়া। সোমসার...রুপকথার রাজ্য..!
দামোদর নদ আর শালি নদীর মিলনস্থান..। গরমকালের সোমসার মানেই সাদা আঁকর ফুলে ভরা বন..পাকা আঁকর ফলের খোসা কালচে লাল আর ভিতরটা লিচুর মতো শাঁসালো সাদা। দারুণ খেতে কিন্তু খেলেই মুখে আঁশটে গন্ধ! কালবৈশাখীর আগমন হলেই নানিজান মেজমামাকে বলতেন আম বাগানে যেতে। মামার সাথে আমরাও হুল্লোড় করে যেতাম সরু আলপথ পেরিয়ে বাগানে। দৌড় ..দৌড়..দৌড়..সব্বার আগে পৌঁছাতে হবে.. ঝড়ে ধুপধাপ করে কাঁচা আম পড়তো..কুড়িয়ে জড়ো করতাম ঝুড়িতে, কে কটা আম কুড়োতে পারে তার কমপিটিশন..!
বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা নেমে আসছে আকাশের বুক চিরে। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছি .. পাগল হাওয়া.. বৃষ্টির আলতো ছোঁয়া.. বৃষ্টিতে দুহাত বাড়িয়ে দেখছি কমলো কিনা..
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে...
সামনে পাগল নদী..উতল হাওয়া..এক ছুট্টে বাড়ি...
আম্মু,নানিজান,নানাভাই মাথা মুছিয়ে দিচ্ছেন..গরম দুধ আর লালস্বণর্ চালের হাতে ভাজা মুড়ি, মুড়িতে ভাজা কুসুম মেশানো.. অসাধারণ টেস্ট।
সামনে বাঁশ বনের মাথায় ঘন কালো মেঘ,বাতাসে সোঁ সোঁ শব্দ.. হনুমান গুলো ভাঙা দালানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টায়... চারিদিকে আতা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। ফলসা গাছে ভিজে একসা কাক। দিঘীর জলে বৃষ্টির আলপনা...রুপকথার রাজ্য মায়াবী রহস্যময়ী!
মানকচু পাতা দিয়ে ছাউনি বানিয়ে আমি,নিউ,কচি,রিমু,শুভ সবাই মিলে সংসার পেতেছি।
বৃষ্টির দমক বাড়ছে..ছাউনি উড়ে যাওয়ার অবস্থায়। সব্বাই মিলে জোরে জোরে বলছি..
লেবু পাতায় করমচা, হে বৃষ্টি থেমে যা!
পলাশ পাতার মুকুট মাথায় শাপলা তুলতে যেতাম বাড়িতে না জানিয়ে, দুধসাদা ফুল, ফুলের মাঝে কোরক যেটা খেতে জাস্ট অসাধারণ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে পুকুর পাড়ে, টুথব্রাশ হাতে নিয়ে.. পেস্টের ফেনায় বাঁশপাতার তৈরি নৌকা সরসর করে এগিয়ে যেত মাঝ পুকুরে..সুন্দরী রুপচাঁদা মাছ ঘুরঘুর করছে ঘাটে...
আজ নানিজান,নানাভাই নেই...আমার রুপকথার রাজ্্যও নেই... কৈশোর হারিয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়!
অ্যায় মেয়েটা নাম কিরে তোর?
ছোট্ট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম মেঘ হবো,উড়ে বেড়াব দেশেবিদেশে! সাদা..সোনালি..গোলাপী মেঘের দল..
এখনো দেখি স্বপ্ন, তবে বৃষ্টি হওয়ার...একরাশ অভিমান হয়ে ঝরে পড়বো রামগড়ুরের ছানার উপর!
গরমের ছুটি মানেই ছিলো ভারি মজা, মামার বাড়ি যাওয়া। সোমসার...রুপকথার রাজ্য..!
দামোদর নদ আর শালি নদীর মিলনস্থান..। গরমকালের সোমসার মানেই সাদা আঁকর ফুলে ভরা বন..পাকা আঁকর ফলের খোসা কালচে লাল আর ভিতরটা লিচুর মতো শাঁসালো সাদা। দারুণ খেতে কিন্তু খেলেই মুখে আঁশটে গন্ধ! কালবৈশাখীর আগমন হলেই নানিজান মেজমামাকে বলতেন আম বাগানে যেতে। মামার সাথে আমরাও হুল্লোড় করে যেতাম সরু আলপথ পেরিয়ে বাগানে। দৌড় ..দৌড়..দৌড়..সব্বার আগে পৌঁছাতে হবে.. ঝড়ে ধুপধাপ করে কাঁচা আম পড়তো..কুড়িয়ে জড়ো করতাম ঝুড়িতে, কে কটা আম কুড়োতে পারে তার কমপিটিশন..!
বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা নেমে আসছে আকাশের বুক চিরে। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছি .. পাগল হাওয়া.. বৃষ্টির আলতো ছোঁয়া.. বৃষ্টিতে দুহাত বাড়িয়ে দেখছি কমলো কিনা..
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে...
সামনে পাগল নদী..উতল হাওয়া..এক ছুট্টে বাড়ি...
আম্মু,নানিজান,নানাভাই মাথা মুছিয়ে দিচ্ছেন..গরম দুধ আর লালস্বণর্ চালের হাতে ভাজা মুড়ি, মুড়িতে ভাজা কুসুম মেশানো.. অসাধারণ টেস্ট।
সামনে বাঁশ বনের মাথায় ঘন কালো মেঘ,বাতাসে সোঁ সোঁ শব্দ.. হনুমান গুলো ভাঙা দালানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টায়... চারিদিকে আতা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। ফলসা গাছে ভিজে একসা কাক। দিঘীর জলে বৃষ্টির আলপনা...রুপকথার রাজ্য মায়াবী রহস্যময়ী!
মানকচু পাতা দিয়ে ছাউনি বানিয়ে আমি,নিউ,কচি,রিমু,শুভ সবাই মিলে সংসার পেতেছি।
বৃষ্টির দমক বাড়ছে..ছাউনি উড়ে যাওয়ার অবস্থায়। সব্বাই মিলে জোরে জোরে বলছি..
লেবু পাতায় করমচা, হে বৃষ্টি থেমে যা!
পলাশ পাতার মুকুট মাথায় শাপলা তুলতে যেতাম বাড়িতে না জানিয়ে, দুধসাদা ফুল, ফুলের মাঝে কোরক যেটা খেতে জাস্ট অসাধারণ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে পুকুর পাড়ে, টুথব্রাশ হাতে নিয়ে.. পেস্টের ফেনায় বাঁশপাতার তৈরি নৌকা সরসর করে এগিয়ে যেত মাঝ পুকুরে..সুন্দরী রুপচাঁদা মাছ ঘুরঘুর করছে ঘাটে...
আজ নানিজান,নানাভাই নেই...আমার রুপকথার রাজ্্যও নেই... কৈশোর হারিয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়!
বৃষ্টিবিলাস১
-- আমি যখন ছোট্ট ছিলাম
খেলতে যেতাম মেঘের দলে...
প্রতিটা মানুষের জীবনে বৃষ্টি একটা আলাদা স্থান পেয়েছে। প্রতিটা বাঙালি মেয়ের মতো বৃষ্টি আমারও সতীন। আমি দুয়োরাণী আর সে সুয়োরাণী। বৃষ্টি ভীষণভাবে প্রিয় রামগড়ুরের ছানার। কোনো এক মূহুতের্ আবেগপ্রবণ হয়ে তার এই স্বীকারোক্তি। ভীষণ হিংসা হয়েছিল। এখনো হয়।
কিন্তু তাকে হিংসা করে কি থাকা যায়? আমার শৈশব, আমার কিশোরীবেলার সঙ্গী । কোনো এক বৃষ্টিবেলায় উতল হাওয়ায় ওড়া চুল আর বৃষ্টির পরশে আমার হটাৎ জেগে ওঠা মেয়েবেলা।
বৃষ্টি মানেই তখন লোডশেডিং। ব্যাটারিতে জ্বলা মায়াভরা হলুদ আলো। আমাদের বাড়িতে তখন জেনারেটর ছিলো না। তখন জানতাম শুধুমাত্র বড়োলোকরাই ব্যবহার করে জেনারেটর। এখনো নেই অবশ্য। সে যাইহোক, ব্যাটারির আলো খুববেশি হলে এক ঘন্টা চলতো। তারপর বই খাতা গুটিয়ে হুল্লোড়,আমরা তিন ভাইবোন। চলতো আন্তাক্ষরী। শ্রোতা আব্বু,আম্মু,দাদি সব্বাই। মাঝেমধ্যে আম্মু গান ধরিয়ে দিতো। না পারলে বিপক্ষ এক পয়েন্ট পাবে। কচি গলায় গেয়ে উঠতাম "শ্যামল শোভন শ্রাবন তুমি নাই বা গেলে।"
কখনো কখনো আব্বুর সাথে রাক্ষস রাক্ষস খেলা। আব্বুর পুরো শরীরটা বালিশ দিয়ে ঢেকে দিতাম। আব্বু চুপ করে শুয়ে থাকতো আর কিছুক্ষণ পর লাফিয়ে উঠে আমাদের ভয় দেখাতো হাউ মাউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পাঁউ। আর হাত বাড়িয়ে আমাদের ধরার চেষ্টা করতো, আমরা দৌড়ে পালিয়ে যেতাম। এতেই কি আনন্দ!
শহরের বৃষ্টি আর গ্রামের বৃষ্টির দিনের মধে্য অনেক পাথর্ক্য। আমাদের বধর্মানের বৃষ্টির দিন মানে দাদাভাইয়ের বাজার করে আনা একরাশ সব্জি দিয়ে বানানো গরম খিচুড়ি, সঙ্গে ডিমভুনা আর বাড়িতে বানানো ঘি। রেনি ডে হলে সেদিন কি মজা। চলতো পুতুল খেলা, আমার মেয়ে পুতুল..জুঁইয়ের ছেলে পুতুলের বিয়ে.. কিন্তু আমার মেয়েকে আমি মোটেই শ্বশুরবাড়ি পাঠাবোনা! আমি ঘর জামাই করে রাখতাম জুঁইয়ের ছেলেকে! বেচারা জুঁই বউমার জন্য শাড়ি গহনা মিষ্টি পাঠিয়ে ক্লান্ত।
নাহলে রেনকোট পড়ে ইসকুল। গায়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে আর জলতরঙ্গের সুর তুলছে।
আব্বুর উটকো শখে আমাকে সবুর স্যারের কাছে বাংলা পড়তে যেতে হয়েছিল কিছুদিন। ভোর ছটায় পড়া। বেচারা জুঁই সাড়ে পাঁচটায় রেডি হয়ে আমাদের বাড়ি চলে আসতো। আমাকে ঘুম থেকে তুলতে! আম্মু,আব্বু আর জুঁইয়ের প্রাণান্ত চেষ্টায় সাড়ে ছটায় স্যারের বাড়ি। স্যার হলেন আমার দেখা একমাত্র অতি ধার্মিক যে কিনা সাহিত্যের লোক।
কামিজ পরা নিয়ে জ্ঞান দিতেন । আমি তখন হাঁটু অবধি অ্যালান ফ্রক নইলে স্কার্ট পরি।
জুঁই তখন সদ্য কৈশোরে পা রাখার অহংকারে সালোয়ার কামিজ পড়ছে। রানি কালারের উপর সাদা ফুটকি পি্রন্ট। কে অতো জ্ঞান শুনবে স্যারের! তার থেকে আমি ঢের বেশি ইন্টারেসটেড, স্যারের বাড়ির সামনে বষর্ায় গজানো কচিসবুজ কলমি বন নিয়ে। হাল্কা বেগুনি কলমি ফুল, মৌমাছি,প্রজাপতি ছেড়ে কে পড়াশোনা করে! জুঁইয়ের পড়া শেষ হলে হোমটাস্ক আর হাতভরে কলমি ফুল নিয়ে সোজা বাড়ি। তারপর গোসল করে খেয়েদেয়ে ঝিমঝিম বৃষ্টিতে রেনকোট পরে ইসকুলের পথে।
আমাদের স্কুলটা অনেক পুরোনো। বড়ো বড়ো খড়খড়ি দেওয়া জানালা। বেশি বৃষ্টির সময় ছাঁট আটকাতে জানালা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হতো। অন্ধকার ক্লাস রুম,একটা গা ছম্ছমে ব্যাপার, তার মধে্য আমাদের জলসা। সুরেলা,রিনি এরা দারুণ গান গাইতো, কখনো আমি আবৃত্তি করতাম। রবি ঠাকুরের সংকলিতা থেকে "বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদেয় এলো বান",কখনোবা সঞ্চয়িতা থেকে "গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা"!
ক্লাস ফাইভ অবধি স্কুলবাসে । তিন নম্বর বাস। আমাদের বাড়িটা এমন জায়গায় ছিলো যে ইসকুল যাওয়ার সময় লাস্ট স্টপ আর ইসকুল থেকে ফেরার সময় ফার্স্ট স্টপ। তারপর হঠাত্ করে একদিন শৈশব পেরিয়ে কৈশোর। বৃষ্টির দিনে ইসকুল থেকে ফেরার পথে সাইকেল ,ভেজা শাড়ি আর ঝাপসা হয়ে আসা চশমা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি আসা। রেনকোট পড়েও কাকভেজা । বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে ফেলে আসা সোনার শৈশব।
খেলতে যেতাম মেঘের দলে...
প্রতিটা মানুষের জীবনে বৃষ্টি একটা আলাদা স্থান পেয়েছে। প্রতিটা বাঙালি মেয়ের মতো বৃষ্টি আমারও সতীন। আমি দুয়োরাণী আর সে সুয়োরাণী। বৃষ্টি ভীষণভাবে প্রিয় রামগড়ুরের ছানার। কোনো এক মূহুতের্ আবেগপ্রবণ হয়ে তার এই স্বীকারোক্তি। ভীষণ হিংসা হয়েছিল। এখনো হয়।
কিন্তু তাকে হিংসা করে কি থাকা যায়? আমার শৈশব, আমার কিশোরীবেলার সঙ্গী । কোনো এক বৃষ্টিবেলায় উতল হাওয়ায় ওড়া চুল আর বৃষ্টির পরশে আমার হটাৎ জেগে ওঠা মেয়েবেলা।
বৃষ্টি মানেই তখন লোডশেডিং। ব্যাটারিতে জ্বলা মায়াভরা হলুদ আলো। আমাদের বাড়িতে তখন জেনারেটর ছিলো না। তখন জানতাম শুধুমাত্র বড়োলোকরাই ব্যবহার করে জেনারেটর। এখনো নেই অবশ্য। সে যাইহোক, ব্যাটারির আলো খুববেশি হলে এক ঘন্টা চলতো। তারপর বই খাতা গুটিয়ে হুল্লোড়,আমরা তিন ভাইবোন। চলতো আন্তাক্ষরী। শ্রোতা আব্বু,আম্মু,দাদি সব্বাই। মাঝেমধ্যে আম্মু গান ধরিয়ে দিতো। না পারলে বিপক্ষ এক পয়েন্ট পাবে। কচি গলায় গেয়ে উঠতাম "শ্যামল শোভন শ্রাবন তুমি নাই বা গেলে।"
কখনো কখনো আব্বুর সাথে রাক্ষস রাক্ষস খেলা। আব্বুর পুরো শরীরটা বালিশ দিয়ে ঢেকে দিতাম। আব্বু চুপ করে শুয়ে থাকতো আর কিছুক্ষণ পর লাফিয়ে উঠে আমাদের ভয় দেখাতো হাউ মাউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পাঁউ। আর হাত বাড়িয়ে আমাদের ধরার চেষ্টা করতো, আমরা দৌড়ে পালিয়ে যেতাম। এতেই কি আনন্দ!
শহরের বৃষ্টি আর গ্রামের বৃষ্টির দিনের মধে্য অনেক পাথর্ক্য। আমাদের বধর্মানের বৃষ্টির দিন মানে দাদাভাইয়ের বাজার করে আনা একরাশ সব্জি দিয়ে বানানো গরম খিচুড়ি, সঙ্গে ডিমভুনা আর বাড়িতে বানানো ঘি। রেনি ডে হলে সেদিন কি মজা। চলতো পুতুল খেলা, আমার মেয়ে পুতুল..জুঁইয়ের ছেলে পুতুলের বিয়ে.. কিন্তু আমার মেয়েকে আমি মোটেই শ্বশুরবাড়ি পাঠাবোনা! আমি ঘর জামাই করে রাখতাম জুঁইয়ের ছেলেকে! বেচারা জুঁই বউমার জন্য শাড়ি গহনা মিষ্টি পাঠিয়ে ক্লান্ত।
নাহলে রেনকোট পড়ে ইসকুল। গায়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে আর জলতরঙ্গের সুর তুলছে।
আব্বুর উটকো শখে আমাকে সবুর স্যারের কাছে বাংলা পড়তে যেতে হয়েছিল কিছুদিন। ভোর ছটায় পড়া। বেচারা জুঁই সাড়ে পাঁচটায় রেডি হয়ে আমাদের বাড়ি চলে আসতো। আমাকে ঘুম থেকে তুলতে! আম্মু,আব্বু আর জুঁইয়ের প্রাণান্ত চেষ্টায় সাড়ে ছটায় স্যারের বাড়ি। স্যার হলেন আমার দেখা একমাত্র অতি ধার্মিক যে কিনা সাহিত্যের লোক।
কামিজ পরা নিয়ে জ্ঞান দিতেন । আমি তখন হাঁটু অবধি অ্যালান ফ্রক নইলে স্কার্ট পরি।
জুঁই তখন সদ্য কৈশোরে পা রাখার অহংকারে সালোয়ার কামিজ পড়ছে। রানি কালারের উপর সাদা ফুটকি পি্রন্ট। কে অতো জ্ঞান শুনবে স্যারের! তার থেকে আমি ঢের বেশি ইন্টারেসটেড, স্যারের বাড়ির সামনে বষর্ায় গজানো কচিসবুজ কলমি বন নিয়ে। হাল্কা বেগুনি কলমি ফুল, মৌমাছি,প্রজাপতি ছেড়ে কে পড়াশোনা করে! জুঁইয়ের পড়া শেষ হলে হোমটাস্ক আর হাতভরে কলমি ফুল নিয়ে সোজা বাড়ি। তারপর গোসল করে খেয়েদেয়ে ঝিমঝিম বৃষ্টিতে রেনকোট পরে ইসকুলের পথে।
আমাদের স্কুলটা অনেক পুরোনো। বড়ো বড়ো খড়খড়ি দেওয়া জানালা। বেশি বৃষ্টির সময় ছাঁট আটকাতে জানালা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হতো। অন্ধকার ক্লাস রুম,একটা গা ছম্ছমে ব্যাপার, তার মধে্য আমাদের জলসা। সুরেলা,রিনি এরা দারুণ গান গাইতো, কখনো আমি আবৃত্তি করতাম। রবি ঠাকুরের সংকলিতা থেকে "বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদেয় এলো বান",কখনোবা সঞ্চয়িতা থেকে "গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা"!
ক্লাস ফাইভ অবধি স্কুলবাসে । তিন নম্বর বাস। আমাদের বাড়িটা এমন জায়গায় ছিলো যে ইসকুল যাওয়ার সময় লাস্ট স্টপ আর ইসকুল থেকে ফেরার সময় ফার্স্ট স্টপ। তারপর হঠাত্ করে একদিন শৈশব পেরিয়ে কৈশোর। বৃষ্টির দিনে ইসকুল থেকে ফেরার পথে সাইকেল ,ভেজা শাড়ি আর ঝাপসা হয়ে আসা চশমা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি আসা। রেনকোট পড়েও কাকভেজা । বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে ফেলে আসা সোনার শৈশব।
ছোট গল্প# 2 ১৫০৫২০১৫
রজনী রোজ সকালে পড়তে যাওয়ার সময় বাড়ির কাছে ক্লাবটার সামনের কদম গাছের তলায় ছেলেটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। বেশ কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছে সে। ছিমছাম শরীরের ছেলেটাকে ভালো ঘরেরই মনে হয়েছে ওর। ছেলেটার গায়ের রং শ্যামলা।মাথায় এলোমেলো অগোছালো চুল। মাঝারি উচ্চতা। অদ্ভূত ভাবে একদৃষ্টে রজনীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
রজনীর ইসকুলে যাওয়ার সময়েও একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটার কি কোনো কাজকর্ম নেই! দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া। অ্যাটলিস্ট দাড়োয়ানের কাজ করতে পারত! একরাশ বিরক্তিতে মন ভরে গেল রজনীর।
কিছুদিন পরের কথা। অনন্ত বাবুর ব্যাচ শেষে সুমন রজনীকে বললো তোর সাথে কিছু কথা আছে।
সুমন রজনীর সাথে একই ব্যাচে পড়ে।
-- তোকে একজনের খুব পছন্দ হয়েছে।
-- মানে? কি ফালতু বকছিস!
-- সতি্য কথা, আমার বন্ধু। তুই তাকে চিনিস, অনেকবার দেখেওছিস।
-- আমি তাকে চিনি? কি ভাবে? অবাক চোখে একরাশ প্রশ্ন রজনীর চোখে। সুমন একটু ঘাবড়ে গেলো।
-- না মানে বলছিলাম আমার একজন বন্ধুর তোকে ভালো লেগেছে, তুই যদি একটু কথা বলতিস! বেশ নার্ভাস হয়েই বললো সুমন!
সুমনের কথা শেষ হতে না হতেই রজনী দেখলো সেই ছেলেটা এগিয়ে আসছে।বেগতিক দেখে সুমন কেটে পড়ে।
ছেলেটা কিছু বলার আগেই রজনী রাগত গলায় বলে উঠল দেখ সামনেই বোর্ডের এগজ্যাম, আমি এখন এই সব নিয়ে একটুও বদার্ড নই!! আমাকে একদম ডিসটার্ব করবে না এইসব ফালতু জিনিসের জন্য।
পরের দিন থেকে আর কোনদিন ছেলেটিকে দেখেনি রজনী।
বোর্ডের রেজাল্টের পর নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে রজনী।
হঠাৎ একদিন ফোন এলো সুমনের।
-- রজনী তুই কি একবার সিটি হসপিটালে আসতে পারবি?
-- বুকটা ছাঁৎ করে উঠল রজনীর!
কেন? কি হয়েছে?
-- আয় না একটু সময় করে! একটু আর্জেন্ট।
বিকেলের দিকে হসপিটালে গিয়েছিল রজনী।
বেডে ধ্রুব শুয়েছিল, শীর্ণকায় ফ্যাকাশে চেহারা। কথা বলতে পারছে না। তবে জ্ঞান আছে এখনো। শেষ ইচ্ছে পূরণের আনন্দে চোখে জল।
বেশ কয়েকটা বছর পেরিয়ে গেছে, রুদ্রর সাথে উত্তাপহীন সম্পকর্ে , রজনী আজ ভালোবাসার খোঁজে!
ধ্রুব থাকলে কি এই শূন্যতা থাকতো!! বুক টা মুচড়ে উঠল রজনীর। ক্যান্সার শুধু একজনকে নয়, অনেকজনের জীবনে বদল আনে।
দীর্ঘশ্বাসের সাথে অশ্রুজল মিলে জীবনটাও নোনতা! ভালোবাসা প্রত্যাখ্যানের কষ্টটা এই প্রথম বুঝতে পারলো রজনী!
সুমন রজনীর সাথে একই ব্যাচে পড়ে।
-- তোকে একজনের খুব পছন্দ হয়েছে।
-- মানে? কি ফালতু বকছিস!
-- সতি্য কথা, আমার বন্ধু। তুই তাকে চিনিস, অনেকবার দেখেওছিস।
-- আমি তাকে চিনি? কি ভাবে? অবাক চোখে একরাশ প্রশ্ন রজনীর চোখে। সুমন একটু ঘাবড়ে গেলো।
-- না মানে বলছিলাম আমার একজন বন্ধুর তোকে ভালো লেগেছে, তুই যদি একটু কথা বলতিস! বেশ নার্ভাস হয়েই বললো সুমন!
সুমনের কথা শেষ হতে না হতেই রজনী দেখলো সেই ছেলেটা এগিয়ে আসছে।বেগতিক দেখে সুমন কেটে পড়ে।
ছেলেটা কিছু বলার আগেই রজনী রাগত গলায় বলে উঠল দেখ সামনেই বোর্ডের এগজ্যাম, আমি এখন এই সব নিয়ে একটুও বদার্ড নই!! আমাকে একদম ডিসটার্ব করবে না এইসব ফালতু জিনিসের জন্য।
পরের দিন থেকে আর কোনদিন ছেলেটিকে দেখেনি রজনী।
বোর্ডের রেজাল্টের পর নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে রজনী।
হঠাৎ একদিন ফোন এলো সুমনের।
-- রজনী তুই কি একবার সিটি হসপিটালে আসতে পারবি?
-- বুকটা ছাঁৎ করে উঠল রজনীর!
কেন? কি হয়েছে?
-- আয় না একটু সময় করে! একটু আর্জেন্ট।
বিকেলের দিকে হসপিটালে গিয়েছিল রজনী।
বেডে ধ্রুব শুয়েছিল, শীর্ণকায় ফ্যাকাশে চেহারা। কথা বলতে পারছে না। তবে জ্ঞান আছে এখনো। শেষ ইচ্ছে পূরণের আনন্দে চোখে জল।
বেশ কয়েকটা বছর পেরিয়ে গেছে, রুদ্রর সাথে উত্তাপহীন সম্পকর্ে , রজনী আজ ভালোবাসার খোঁজে!
ধ্রুব থাকলে কি এই শূন্যতা থাকতো!! বুক টা মুচড়ে উঠল রজনীর। ক্যান্সার শুধু একজনকে নয়, অনেকজনের জীবনে বদল আনে।
দীর্ঘশ্বাসের সাথে অশ্রুজল মিলে জীবনটাও নোনতা! ভালোবাসা প্রত্যাখ্যানের কষ্টটা এই প্রথম বুঝতে পারলো রজনী!
Subscribe to:
Posts (Atom)