Monday, 8 June 2015

বৃষ্টিবিলাস২

একদিন এক মেঘবালিকা বললো এসে কৌতূহলে
অ্যায় মেয়েটা নাম কিরে তোর?
ছোট্ট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম মেঘ হবো,উড়ে বেড়াব দেশেবিদেশে! সাদা..সোনালি..গোলাপী মেঘের দল..
এখনো দেখি স্বপ্ন, তবে বৃষ্টি হওয়ার...একরাশ অভিমান হয়ে ঝরে পড়বো রামগড়ুরের ছানার উপর!
গরমের ছুটি মানেই ছিলো ভারি মজা, মামার বাড়ি যাওয়া। সোমসার...রুপকথার রাজ্য..!
দামোদর নদ আর শালি নদীর মিলনস্থান..। গরমকালের সোমসার মানেই সাদা আঁকর ফুলে ভরা বন..পাকা আঁকর ফলের খোসা কালচে লাল আর ভিতরটা লিচুর মতো শাঁসালো সাদা। দারুণ খেতে কিন্তু খেলেই মুখে আঁশটে গন্ধ! কালবৈশাখীর আগমন হলেই নানিজান মেজমামাকে বলতেন আম বাগানে যেতে। মামার সাথে আমরাও হুল্লোড় করে যেতাম সরু আলপথ পেরিয়ে বাগানে। দৌড় ..দৌড়..দৌড়..সব্বার আগে পৌঁছাতে হবে.. ঝড়ে ধুপধাপ করে কাঁচা আম পড়তো..কুড়িয়ে জড়ো করতাম ঝুড়িতে, কে কটা আম কুড়োতে পারে তার কমপিটিশন..!
বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা নেমে আসছে আকাশের বুক চিরে। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছি .. পাগল হাওয়া.. বৃষ্টির আলতো ছোঁয়া.. বৃষ্টিতে দুহাত বাড়িয়ে দেখছি কমলো কিনা..
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে...
সামনে পাগল নদী..উতল হাওয়া..এক ছুট্টে বাড়ি...
আম্মু,নানিজান,নানাভাই মাথা মুছিয়ে দিচ্ছেন..গরম দুধ আর লালস্বণর্ চালের হাতে ভাজা মুড়ি, মুড়িতে ভাজা কুসুম মেশানো.. অসাধারণ টেস্ট।
সামনে বাঁশ বনের মাথায় ঘন কালো মেঘ,বাতাসে সোঁ সোঁ শব্দ.. হনুমান গুলো ভাঙা দালানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টায়... চারিদিকে আতা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। ফলসা গাছে ভিজে একসা কাক। দিঘীর জলে বৃষ্টির আলপনা...রুপকথার রাজ্য মায়াবী রহস্যময়ী!
মানকচু পাতা দিয়ে ছাউনি বানিয়ে আমি,নিউ,কচি,রিমু,শুভ সবাই মিলে সংসার পেতেছি।
বৃষ্টির দমক বাড়ছে..ছাউনি উড়ে যাওয়ার অবস্থায়। সব্বাই মিলে জোরে জোরে বলছি..
লেবু পাতায় করমচা, হে বৃষ্টি থেমে যা!
পলাশ পাতার মুকুট মাথায় শাপলা তুলতে যেতাম বাড়িতে না জানিয়ে, দুধসাদা ফুল, ফুলের মাঝে কোরক যেটা খেতে জাস্ট অসাধারণ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে পুকুর পাড়ে, টুথব্রাশ হাতে নিয়ে.. পেস্টের ফেনায় বাঁশপাতার তৈরি নৌকা সরসর করে এগিয়ে যেত মাঝ পুকুরে..সুন্দরী রুপচাঁদা মাছ ঘুরঘুর করছে ঘাটে...
আজ নানিজান,নানাভাই নেই...আমার রুপকথার রাজ্্যও নেই... কৈশোর হারিয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়!

1 comment: