Monday, 8 June 2015

ছোট গল্প# 2 ১৫০৫২০১৫


রজনী রোজ সকালে পড়তে যাওয়ার সময় বাড়ির কাছে ক্লাবটার সামনের কদম গাছের তলায় ছেলেটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। বেশ কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছে সে। ছিমছাম শরীরের ছেলেটাকে ভালো ঘরেরই মনে হয়েছে ওর। ছেলেটার গায়ের রং শ্যামলা।মাথায় এলোমেলো অগোছালো চুল। মাঝারি উচ্চতা। অদ্ভূত ভাবে একদৃষ্টে রজনীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
রজনীর ইসকুলে যাওয়ার সময়েও একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটার কি কোনো কাজকর্ম নেই! দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া। অ্যাটলিস্ট দাড়োয়ানের কাজ করতে পারত! একরাশ বিরক্তিতে মন ভরে গেল রজনীর।
কিছুদিন পরের কথা। অনন্ত বাবুর ব্যাচ শেষে সুমন রজনীকে বললো তোর সাথে কিছু কথা আছে।
সুমন রজনীর সাথে একই ব্যাচে পড়ে।
-- তোকে একজনের খুব পছন্দ হয়েছে।
-- মানে? কি ফালতু বকছিস!
-- সতি্য কথা, আমার বন্ধু। তুই তাকে চিনিস, অনেকবার দেখেওছিস।
-- আমি তাকে চিনি? কি ভাবে? অবাক চোখে একরাশ প্রশ্ন রজনীর চোখে। সুমন একটু ঘাবড়ে গেলো।
-- না মানে বলছিলাম আমার একজন বন্ধুর তোকে ভালো লেগেছে, তুই যদি একটু কথা বলতিস! বেশ নার্ভাস হয়েই বললো সুমন!
সুমনের কথা শেষ হতে না হতেই রজনী দেখলো সেই ছেলেটা এগিয়ে আসছে।বেগতিক দেখে সুমন কেটে পড়ে।
ছেলেটা কিছু বলার আগেই রজনী রাগত গলায় বলে উঠল দেখ সামনেই বোর্ডের এগজ্যাম, আমি এখন এই সব নিয়ে একটুও বদার্ড নই!! আমাকে একদম ডিসটার্ব করবে না এইসব ফালতু জিনিসের জন্য।
পরের দিন থেকে আর কোনদিন ছেলেটিকে দেখেনি রজনী।
বোর্ডের রেজাল্টের পর নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে রজনী।
হঠাৎ একদিন ফোন এলো সুমনের।
-- রজনী তুই কি একবার সিটি হসপিটালে আসতে পারবি?
-- বুকটা ছাঁৎ করে উঠল রজনীর!
কেন? কি হয়েছে?
-- আয় না একটু সময় করে! একটু আর্জেন্ট।
বিকেলের দিকে হসপিটালে গিয়েছিল রজনী।
বেডে ধ্রুব শুয়েছিল, শীর্ণকায় ফ্যাকাশে চেহারা। কথা বলতে পারছে না। তবে জ্ঞান আছে এখনো। শেষ ইচ্ছে পূরণের আনন্দে চোখে জল।
বেশ কয়েকটা বছর পেরিয়ে গেছে, রুদ্রর সাথে উত্তাপহীন সম্পকর্ে , রজনী আজ ভালোবাসার খোঁজে!
ধ্রুব থাকলে কি এই শূন্যতা থাকতো!! বুক টা মুচড়ে উঠল রজনীর। ক্যান্সার শুধু একজনকে নয়, অনেকজনের জীবনে বদল আনে।
দীর্ঘশ্বাসের সাথে অশ্রুজল মিলে জীবনটাও নোনতা! ভালোবাসা প্রত্যাখ্যানের কষ্টটা এই প্রথম বুঝতে পারলো রজনী!

No comments:

Post a Comment