একটি
সপ্তদশী কিশোরী কলকাতা শহরে পা রেখেছিলো... প্রিয় জন্মশহরকে ছাড়তে তার
প্রচুর কষ্ট হয়েছিলো... কিছুতেই ভালোবেসে উঠতে পারেনি কলকাতাকে।
নোংরা, ঘিঞ্জি , ভীড়ে ঠাসা কলকাতা তার শহর কখনোই নয়, কোনোদিন সে মনের এক কোণে কলকাতাকে স্থান দেবে না, কিছুতেই নয়।
তারপর নয় বছর কেটে গেছে...গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল...জীবন থেকে চলে গেছে অনেকটা সময়, মনে হয় যেন কত যুগ আগের কথা। পিছনে তাকিয়ে দেখতে পাই কত স্মৃতি জমে গেছে ফেলে আসা জীবনের আনাচে কানাচে।
এই নোংরা শহরটা বড্ড আপন হয়ে গেছে.... পুরোনো রাজপথ, নীল সাদা গ্রীলে ঢাকা ফুটপাত, নিয়ন আলো, ভিখারী সবাই আমার ভীষণ প্রিয়।
এত বছরেও কলকাতাকে সেই ভাবে চিনে উঠতে পারিনি, কেন পারিনি তার পিছনেও রয়েছে অনেক স্মৃতি। তার পরেও মেট্রোর প্রতিটা স্টেশনে, চওড়া রাস্তায় আছে কিছু না কিছু মূহুর্ত লুকিয়ে। যখন সেই স্মৃতি বিজড়িত রাস্তায় নামি তারা এসে মনের ভিতর হাঁকডাক করে...
কলেজ স্ট্রীট আমার কেন এই কলকাতার সব মানুষের প্রিয় একটা জায়গা... কফিহাউস, প্যারামাউন্ট, ট্রামলাইন, অটো সব কিছুই বড়ো প্রিয়।
আমি সবসময়ই চাইতাম কলকাতার সব পুরোনো ইতিহাসকে একবার ছুঁতে, একবার অনুভব করতে। পুরোনো কলকাতার পুরোনো বাড়ির ছাত, জানালা , খড়খড়ি, জানালা দিয়ে দেখতে পাওয়া কড়ি বরগা সবকিছুই আমার অসাধারণ লাগে। মনে হয়, আমার যদি এইরকম পুরোনো বড়ো বারান্দাওলা একটা বাড়ি থাকতো? লম্বা ছাত, যে বাড়ির আনাচে কানাচে যার ইতিহাস লুকোনো... যে বাড়ি সাক্ষী থেকেছে স্বাধীনতা আন্দোলনের, নকশাল আন্দোলনের....যারা সাক্ষী প্রচুর ন্যায়-অন্যায় , বিচার-অবিচারের... ! তাহলে একবার ছুঁয়ে দেখতাম , সেই বাড়ির বারান্দায় বা ছাতে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে ভাবতাম সেইসব দিনগুলোর কথা যখন ভোর রাতে কলকাতার রাজপথ ধোয়া হতো....টুনটুন বেল বাজিয়ে ট্রাম যেতো...পুরোনো কলকাতা শহর।
দেবরিনা আর আমি হাঁটছি কলেজ স্ট্রীট ধরে.... ফুটপাত শুনশান রবিবারের ছুটির বাজারে।
কলেজ চত্বর ফাঁকা.... পুঁটিরামের দোকানের বিখ্যাত কচুরি দিয়ে শুরু করলাম , তারপর প্যারামাউন্টের ডাব সরবত, কেশর লস্যি , মৌচাকের রসালো মৌচাক মিষ্টি, কেশর পিস্তা সন্দেশ খেয়ে স্মৃতি বিজড়িত কফিহাউস।
এক কোণের টেবিলের কাছে গিয়ে বসলাম দুজনে... কত রকমের লোকজন ... সবাই আলোচনা করছে কতরকম.... কেউ কাব্য, কেউ কবিতা, রাজনীতি কতকি। পাশের টেবিলে একজন বৃদ্ধ বসে এক মনে কিছু লিখছেন...লিখেই চলেছেন... কে জানে উনি কে... হয়তো কোনো কবি কিংবা লেখক...
খানিক পরে উঠে চলে গেলেন, পরণে পাঞ্জাবি আর ঝোলা ব্যাগ।
হঠাৎ পাশের টেবিলে একজনের ফোনে রিং বেজে উঠলো...
"আজীব দাস্তা হে ইয়ে
কাহা শুরু কাহা খতম...
ইয়ে মঞ্জিলে হ্যায় কৌনসি
না ওহ সমঝ সাকে না হাম...."
স্মৃতি কখনো পিছু ছাড়ে না....। কোনো এক ফেব্রুয়ারি মাসে অষ্টাদশী কোনো এক মেয়ের সাথে কোনো এক মানুষের প্রথম দেখা হয়েছিলো এই কফিহাউসেই....তখনো ফোনে রিংটোন বেজেছিলো "আজীব দাস্তা হ্যায় ইয়ে!"
আমি আর দেবরিনা দুজনেই কফি ঠান্ডা করে খাই। দুজনেই স্মৃতির অতলে... চারপাশে হাজার মানুষ দেখছি, তাদের নিয়ে গল্প করছি... পুরনো স্মৃতির মধ্য থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুন মূহুর্ত যারা কিছুক্ষণের মধ্যেই নতুন স্মৃতিতে পরিণত হচ্ছে।
স্মৃতি জন্ম নিতেই থাকে প্রতি মূহুর্তে, আর একটু একটু করে আমরা বড়ো হয়ে উঠি...একটা সময় পরে স্মৃতির ভারে ক্লান্ত হয়ে আমরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিই। সেই স্মৃতিরা ইতিহাস হয়ে রয়ে যায় পুরোনো বাড়ি, রাস্তার আনাচে কানাচে।
হেয়ার স্কুল, হিন্দু স্কুল, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল, প্রেসিডেন্সি, মেডিক্যাল কলেজ , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের প্রতিটা রাস্তায় আমরা হাঁটছি। হাল্কা বাতাস বইছে....ইতিউতি লোকের জটলা... হৈ চৈ...
আকাশে এত্তোবড়ো সোনালী একখানা চাঁদ... নিয়ন আলো আর জ্যোৎস্না মিলে মিশে এক হয়ে গেছে।
আমি হাঁটছি তো হাঁটছিই, ইচ্ছে করছে না মূহুর্তটাকে ছাড়তে..সেই কলকাতাকে ঘৃণা করা মেয়েটা আজকে কলকাতাকে বড়ো ভালোবাসে। কলকাতা তাকে অনেক কিছু দিয়েছে ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, ঘৃণা, শিক্ষা, স্মৃতিতে ভরপুর একটা জীবন দিয়েছে।
গভীর রাত নামছে একটু একটু করে, বাড়ি ফিরতে হবে। পিছনে পড়ে আছে ইতিহাস, স্মৃতি , বহুকাল আগের বড়ো বারান্দায় দাঁড়ানো লাল পাড় সাদা শাড়ী পরা কিশোরী কন্যা....একশো বছর আগের কোনো চাঁদনী রাতের মতোই আজকের রাত... জীবন এগিয়ে চলে ইতিহাস রেখে।
গানটা এখনো কানে বাজছে
"ইয়ে সাম যবভি আয়েগি
তুম হামকো ইয়াদ আয়োগে.....!"
নোংরা, ঘিঞ্জি , ভীড়ে ঠাসা কলকাতা তার শহর কখনোই নয়, কোনোদিন সে মনের এক কোণে কলকাতাকে স্থান দেবে না, কিছুতেই নয়।
তারপর নয় বছর কেটে গেছে...গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল...জীবন থেকে চলে গেছে অনেকটা সময়, মনে হয় যেন কত যুগ আগের কথা। পিছনে তাকিয়ে দেখতে পাই কত স্মৃতি জমে গেছে ফেলে আসা জীবনের আনাচে কানাচে।
এই নোংরা শহরটা বড্ড আপন হয়ে গেছে.... পুরোনো রাজপথ, নীল সাদা গ্রীলে ঢাকা ফুটপাত, নিয়ন আলো, ভিখারী সবাই আমার ভীষণ প্রিয়।
এত বছরেও কলকাতাকে সেই ভাবে চিনে উঠতে পারিনি, কেন পারিনি তার পিছনেও রয়েছে অনেক স্মৃতি। তার পরেও মেট্রোর প্রতিটা স্টেশনে, চওড়া রাস্তায় আছে কিছু না কিছু মূহুর্ত লুকিয়ে। যখন সেই স্মৃতি বিজড়িত রাস্তায় নামি তারা এসে মনের ভিতর হাঁকডাক করে...
কলেজ স্ট্রীট আমার কেন এই কলকাতার সব মানুষের প্রিয় একটা জায়গা... কফিহাউস, প্যারামাউন্ট, ট্রামলাইন, অটো সব কিছুই বড়ো প্রিয়।
আমি সবসময়ই চাইতাম কলকাতার সব পুরোনো ইতিহাসকে একবার ছুঁতে, একবার অনুভব করতে। পুরোনো কলকাতার পুরোনো বাড়ির ছাত, জানালা , খড়খড়ি, জানালা দিয়ে দেখতে পাওয়া কড়ি বরগা সবকিছুই আমার অসাধারণ লাগে। মনে হয়, আমার যদি এইরকম পুরোনো বড়ো বারান্দাওলা একটা বাড়ি থাকতো? লম্বা ছাত, যে বাড়ির আনাচে কানাচে যার ইতিহাস লুকোনো... যে বাড়ি সাক্ষী থেকেছে স্বাধীনতা আন্দোলনের, নকশাল আন্দোলনের....যারা সাক্ষী প্রচুর ন্যায়-অন্যায় , বিচার-অবিচারের... ! তাহলে একবার ছুঁয়ে দেখতাম , সেই বাড়ির বারান্দায় বা ছাতে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে ভাবতাম সেইসব দিনগুলোর কথা যখন ভোর রাতে কলকাতার রাজপথ ধোয়া হতো....টুনটুন বেল বাজিয়ে ট্রাম যেতো...পুরোনো কলকাতা শহর।
দেবরিনা আর আমি হাঁটছি কলেজ স্ট্রীট ধরে.... ফুটপাত শুনশান রবিবারের ছুটির বাজারে।
কলেজ চত্বর ফাঁকা.... পুঁটিরামের দোকানের বিখ্যাত কচুরি দিয়ে শুরু করলাম , তারপর প্যারামাউন্টের ডাব সরবত, কেশর লস্যি , মৌচাকের রসালো মৌচাক মিষ্টি, কেশর পিস্তা সন্দেশ খেয়ে স্মৃতি বিজড়িত কফিহাউস।
এক কোণের টেবিলের কাছে গিয়ে বসলাম দুজনে... কত রকমের লোকজন ... সবাই আলোচনা করছে কতরকম.... কেউ কাব্য, কেউ কবিতা, রাজনীতি কতকি। পাশের টেবিলে একজন বৃদ্ধ বসে এক মনে কিছু লিখছেন...লিখেই চলেছেন... কে জানে উনি কে... হয়তো কোনো কবি কিংবা লেখক...
খানিক পরে উঠে চলে গেলেন, পরণে পাঞ্জাবি আর ঝোলা ব্যাগ।
হঠাৎ পাশের টেবিলে একজনের ফোনে রিং বেজে উঠলো...
"আজীব দাস্তা হে ইয়ে
কাহা শুরু কাহা খতম...
ইয়ে মঞ্জিলে হ্যায় কৌনসি
না ওহ সমঝ সাকে না হাম...."
স্মৃতি কখনো পিছু ছাড়ে না....। কোনো এক ফেব্রুয়ারি মাসে অষ্টাদশী কোনো এক মেয়ের সাথে কোনো এক মানুষের প্রথম দেখা হয়েছিলো এই কফিহাউসেই....তখনো ফোনে রিংটোন বেজেছিলো "আজীব দাস্তা হ্যায় ইয়ে!"
আমি আর দেবরিনা দুজনেই কফি ঠান্ডা করে খাই। দুজনেই স্মৃতির অতলে... চারপাশে হাজার মানুষ দেখছি, তাদের নিয়ে গল্প করছি... পুরনো স্মৃতির মধ্য থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুন মূহুর্ত যারা কিছুক্ষণের মধ্যেই নতুন স্মৃতিতে পরিণত হচ্ছে।
স্মৃতি জন্ম নিতেই থাকে প্রতি মূহুর্তে, আর একটু একটু করে আমরা বড়ো হয়ে উঠি...একটা সময় পরে স্মৃতির ভারে ক্লান্ত হয়ে আমরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিই। সেই স্মৃতিরা ইতিহাস হয়ে রয়ে যায় পুরোনো বাড়ি, রাস্তার আনাচে কানাচে।
হেয়ার স্কুল, হিন্দু স্কুল, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল, প্রেসিডেন্সি, মেডিক্যাল কলেজ , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের প্রতিটা রাস্তায় আমরা হাঁটছি। হাল্কা বাতাস বইছে....ইতিউতি লোকের জটলা... হৈ চৈ...
আকাশে এত্তোবড়ো সোনালী একখানা চাঁদ... নিয়ন আলো আর জ্যোৎস্না মিলে মিশে এক হয়ে গেছে।
আমি হাঁটছি তো হাঁটছিই, ইচ্ছে করছে না মূহুর্তটাকে ছাড়তে..সেই কলকাতাকে ঘৃণা করা মেয়েটা আজকে কলকাতাকে বড়ো ভালোবাসে। কলকাতা তাকে অনেক কিছু দিয়েছে ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, ঘৃণা, শিক্ষা, স্মৃতিতে ভরপুর একটা জীবন দিয়েছে।
গভীর রাত নামছে একটু একটু করে, বাড়ি ফিরতে হবে। পিছনে পড়ে আছে ইতিহাস, স্মৃতি , বহুকাল আগের বড়ো বারান্দায় দাঁড়ানো লাল পাড় সাদা শাড়ী পরা কিশোরী কন্যা....একশো বছর আগের কোনো চাঁদনী রাতের মতোই আজকের রাত... জীবন এগিয়ে চলে ইতিহাস রেখে।
গানটা এখনো কানে বাজছে
"ইয়ে সাম যবভি আয়েগি
তুম হামকো ইয়াদ আয়োগে.....!"
No comments:
Post a Comment