বাসের জন্য অপেক্ষা করছি... বেলা গড়িয়ে বিকেল হলেও গরম কমছে না। আমি সাদা
রঙের কালো ফুটিফুটি দেওয়া একটা জামা পরেছি। অনেকেই বলেছে এই জামাটা পড়লেই
আমাকে নাকি পুরানো দিনের হিরোইন লাগে...! বেশ মজা লাগে শুনতে... ছোটো বেলায়
একটা পুরোনো হিন্দি সিনেমায় দেখেছিলাম প্রায় এই রকম একটা জামা পরে হিরোইন
টেনিস খেলছে। আর আশ্চর্যের কথা এই জামাটা পরলেই আমার ঐ সিনটার কথা মনে পড়ে
, আর ভীষণ টেনিস খেলতে ইচ্ছে করে। আমি একটু পাগল টাইপের আছি। ভীষণ রকম
অদ্ভুত ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে। একবার ইচ্ছে হয়েছিল মুরগি পোষার।
তো বাড়িতে মুরগি এলো , তিন ভাইবোনের তিনটে মুরগির বাচ্চা। আমার টা কালো,
নিউয়েরটা সাদার উপর কালো ফুটকিওয়ালা, আর কচির টা হলুদ রঙের। শহরে তো আর
গ্রামের মতো ফাঁকা জায়গা নেই মুরগি পোষার জন্য তাই আব্বু আবার তিন হাজার
টাকা খরচা করে একটা বিশাল খাঁচা কিনে দিল, তাতে অন্তত পঞ্চাশটা মুরগি ধরে।
আম্মু দেখে বেজায় খেপে গেলো। তিনটে মুরগির জন্য এত বড়ো খাঁচা! আমার
আম্মুর ধারণা আব্বুকে সবাই ঠকিয়ে দেয় কারণ আব্বু নাকি খুব বোকা। কোনো এক
অদ্ভুত কারণে স্ত্রীর কাছে স্বামী সবসময়ই বোকা!
সে যাইহোক মুরগির
বাচ্চারা বড়ো হতেই পাঁচিলের উপরেই ইন্টারেস্ট দেখায় বেশি, অতো বড়ো খাঁচায়
তাদের মন টেঁকে না কিছুতেই। সবাই সকাল হলেই পাঁচিলে উঠে পায়রাদের সাথে লাইন
করে বসে থাকে। সারাদিন খায় দায় আর পাঁচিলে উঠে বসে থাকে। মুরগির
বাচ্চাগুলো বড়ো হতেই তাদের লম্বা ঝুঁটি আর লম্বা লম্বা ঠ্যাং হয়ে গেল।
আম্মু মুরগীর বাচ্চাগুলোর গঠন আর স্বভাব দেখে শুনে ডিক্লেয়ার করলো ওগুলো
কোনোভাবেই মুরগি নয়, সব কটা মোরগ। শুধু কচির মুরগি বাচ্চাটা মুরগি হলেও হতে
পারে। শুনে আমাদের হেবি দুঃখু। ডিম খাওয়ার ইচ্ছে সওওব মাটি। মোরগ হলেই
কেটে কুটে খাওয়ার চান্স বেশি। খুব চিন্তায়, আম্মুর মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে
না মোরগ গুলো কে বেশি দিন খাইয়ে দাইয়ে রেখে দেবে। যাই হোক এমনি করতে করতেই
একদিন কচির মুরগি ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, ঐ দিন কচি দেশি মুরগির ডিম খেল
ভাতের সাথে। আমি আর নিউ বসে বসে দেখলাম দুঃখ দুঃখ মুখ করে। ইসকুল থেকে এসেই
আম্মুকে জিজ্ঞাসা করি আমাদের মুরগি ডিম পাড়লো কিনা, অবশেষে একদিন আমাদের
দুজনের মুরগিই ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, খুব মজা।
সে তো গেলো ইচ্ছের কথা।
তা যেটা বলছিলাম বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। বাস আসতে এখনো দেরি আছে।
মন্দিরের মার্বেল বাঁধানো চাতালে বসে আছি, ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। দুটো
শালিখ পে্রম করছে, একজন ঠোঁট দিয়ে আর একজনের মাথা চুলকে দিচ্ছে।
হঠাৎ একটা লোকের দিকে চোখ আটকে গেল। লোকটা আইসক্রিম খাচ্ছে, আইসক্রিমটার রংটা খুব সুন্দর... আকাশনীল রংয়ের!
দেখেই খুব ভালো লাগল, ইচ্ছে করলেই কিনে খাওয়া যেতো, কিন্তু ইচ্ছেটাই হচ্ছে
না। লোকটার আইসক্রিম খাওয়া দেখছি হাঁ করে, লোকটা ভাবছে হয়তো " কি হ্যাংলা
মেয়েরে বাবা।" আমার কখনও কোনো জিনিস ভালো লাগলে সেটা তখনি কিনি না, তাতে
ভালো লাগাটাই নষ্ট হয়ে যায়, রেখে দিই পরে কখনও কিনবো বলে। ছোট্ট বেলায় একটা
পুতুল খুব ভালো লেগেছিলো, অনেক দাম ছিল তাই আর কেনা হয়নি। এখনো দোকানটার
সামনে গেলে দাঁড়িয়ে দেখি পুতুলটাকে। আমার মেয়েকে কিনে দেবো হয়তো কখনো।
আজকে আইসক্রিমটা কিনবো না, ভাল লাগা মুগ্ধতাটা জিইয়ে রাখব। অন্য হঠাৎ
একদিন এমনি সুন্দর বিকেলে আকাশনীল আইসক্রিমটা কিনব, হয়তোবা তখন মেঘ জমবে
আকাশে, কে জানে হয়তো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়বে। একটা মেয়ে আকাশনীল আইসক্রিম
খেতে খেতে হারিয়ে যাবে ভীড়ের মাঝে।
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete