আকাশ এখনো পুরোপুরি পরিস্কার হয়নি, তার উপর শ্রাবণের মেঘের ঘনঘটা। রাত
থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারপোটর্ের ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের কাছে একটা
চেয়ারে বসে আছে দিওতিমা। পরণে লাল পালাজো প্যান্ট আর টপ, চুলটা খোলা, হাতে
একটা ফার্স্টট্রাকের রিষ্ট ওয়াচ। সারা মুখে রাত জাগার ক্লান্তি। এখন ভোর
সাড়ে চারটে বাজে প্রায়। আকাশের মুখ ভার, এখনো বেশ অন্ধকার। ডোমেস্টিক
টার্মিনালের কাছে লম্বা লাইন। ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের দিকটা প্রায়
জনশূন্য। কিছুটা দূরের চেয়ারে দুজন লোক বসে আছে, মাঝেমধ্যেই দিওতিমাকে
লক্ষ্য করছে। এই মূহুতের্ দিওতিমার খুব কান্না পাচ্ছে। ঋককে অনেকক্ষন ধরে
ফোন করছে দিওতিমা, কিছুতেই ফোন ওঠাচ্ছে না। মেসেজ করার চেষ্টা করেছে বেশ
কয়েকবার, কিন্তু কোনো কারনে মেসেজ ডেলিভার হচ্ছে না। দিওতিমা হোয়াট্স অ্যাপ
করে জানিয়ে দিয়েছে এয়ারপোটর্ আসার কথা। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো
দিওতিমা,প্রায় তিরিশ বার কল করেছে সে, কিন্তু ফোন কেন ওঠাচ্ছে না ঋক!
আটটার সময় হংকং যাওয়ার ফ্লাইট ঋকের,সেটা যদি হয় এতক্ষনে বাড়ি থেকে
এয়ারপোটর্ের উদ্দেশে্য বেরিয়ে যাওয়ার কথা। ফোনটা না তোলার তো কারণ নেই ওর।
তবে কি ইচ্ছে করে ফোন তুলছে না ঋক? নাকি ও হংকং যাচ্ছে না? তাই যদি হয় এতো
বড়ো মিথ্যেটা বলতে পারল ঋক? মিথ্যে তো কম কিছু বলে না সে দিওতিমাকে।
কাল রাতের ঝামেলার পর থেকেই ফোন তুলছে না ঋক। এয়ারপোটর্ে আসার কথা বলে উঠতে
পারেনি দিওতিমা, ভেবেছিল সারপ্রাইজ দেবে। এখন নিজেই সারপ্রাইজড্ হয়ে
যাচ্ছে।
কি করবে বুঝতে পারছে না, বাড়ি চলে যাবে নাকি অপেক্ষা করবে
কিছুক্ষন আরো। ভাবতে ভাবতেই হোয়াট্সঅ্যাপে ঋকের মেসেজ ভেসে উঠলো , তুমি
বাড়ি চলে যাও, আমি তোমাকে পরে সময় পেলে ফোন করবো।
টপটপ করে চোখের জলের বড়ো বড়ো ফোঁটা ঝরে পড়ছে ফোনের স্ক্রীনের উপর। মাথা নিচু করে বসে আছে দিওতিমা, অঝোর ধারায় স্নাত।
পাঁচটা বেজে গেছে। আকাশের ঘন কালো মেঘ ভোরের আলোকে আটকে রেখেছে। মেঘলা মন
খারাপ করা অন্ধকার। কয়েকটা কাক, শালিখ নিজেদের মধে্য ঝগড়া করছে, ঝগড়া
করতে করতে মারপিট করতে শুরু করলো, অন্য সময় হলে দিওতিমা ব্যাপারটা এনজয়
করতো । কিন্তু এখন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে সে , নিজেকে সামলানোর মতো
কঠিন কাজ বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই। পেটে হাল্কা চিনচিনে ব্যথা করছে, কাল
রাতের ডিনারের পর আর কিছু খায়নি তাই মনে হয়।
কি করবে দিওতিমা? নিজেকে
যেচে অপমানিত করার জন্য দিওতিমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজেরই উপর। একা মেয়ের
প্রতি চারপাশের লোকজনদের প্রচুর কৌতূহল। দিওতিমার দিকেই সবার লক্ষ্য। একটা
একটা করে অজস্র্র গাড়ি ঢুকছে, কিন্তু ঋকের কালো গাড়িটার কোনো দেখা নেই।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পাঁচটা চল্লিশ বেজে গেছে। দেড় ঘন্টা বসে আছে সে।
নাহ! আজ আর বোধহয় ঋক আসবে না। আবার দিওতিমাকে মিথ্যে বলেছে নিশ্চয়ই। শরীর
খারাপ লাগছে খুব, বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই ঋকের কালো গাড়িটা চোখে
পড়লো।
অপেক্ষারত দিওতিমাকে চোখে পড়তে অবশ্য দেরি হয়নি ঋকের। গাড়ি থেকে নেমে দিওতিমার দিকে আসছে। এসেছো কেন? কি দরকার ছিল আসার?
সতি্যই তো কেন এসেছে দিওতিমা. একটা কঠিন হৃদয় মানুষের কাছে এর থেকে বেশি
কি আশা করা যায়!! কান্না চাপা গলায় বলে উঠলো তোমার সাথে দেখা করতে ঋক,
দুঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছি। অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, ফোন ,
হোয়াটস্ অ্যাপ, মেসেজ, ঋক তুমি উত্তর কেন দিচ্ছিলে না?
অধৈর্য্য মুখে ঋক বলে উঠল আমি কি তোমায় আসতে বলেছিলাম? দেখো দিয়া, আমার হাতে সময় বেশি নেই, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
কিছু বলার নেই ঋক, তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, ভেবেছিলাম তোমার ভালো
লাগবে, তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তুমি যাও, তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
চেকিং এর স্বয়ংস্ক্রীয় কাঁচের দরজাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঋক চলে যাচ্ছে,
দিওতিমা তাকিয়ে আছে। ঋকের কাছে পিছনের দিকে তাকানোর মতো কিছুই নেই। শেষ
বারের মতো তাকালো দিওতিমা।
একরাশ মন খারাপ নিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধে্য
ফুটপাথ ধরে হাঁটছে দিওতিমা, এই বৃষ্টির একটা সুন্দর ইংরেজি নাম আছে,
ডি্রজলিং। রাস্তার ধারে যত্ন করে লাগানো পাতাবাহার গাছের ঝোপে অযত্নে বেড়ে
ওঠা নাম না জানা গাছে কমলা হলুদ ফুল ফুটেছে। কি অদ্ভূত ব্যাপার, ভালোবাসা
ছাড়াই যত্ন করে কমলা হলুদ সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে।
শ্রাবণের ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির দমক বাড়ছে, ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে দিওতিমা ... চোখের জল আর বৃষ্টির জলে।
Monday, 28 September 2015
প্রস্ফুটিত গোলাপ
কতদিন পরে আমার পুরো নাম মানে পিতৃদত্ত নাম টা ব্যবহার করলাম। সেই কবে প্রতিযোগীতা গুলোতে পুরো নাম লিখতাম, কাজী ফারহা ইয়াসমিন।
যখন পুরস্কারের জন্য পুরো নাম ঘোষিত হতো, কি ভালোই না লাগতো। আমিই তারপর নামটা কাটাছেঁড়া করে কখনো ফারহা ইয়াসমিন কখনো বা ফারহা কাজী লিখতে শুরু করি। কিন্তু আমার পুরো নাম ছাড়া আমি যে ভীষন ভাবে অপূর্ণ আজকেই হঠাৎ মনে হল। মেয়েরা বড়ো হয়ে গেলে বোধহয় বাবা দেওয়া সব কিছুর প্রতিই ভীষণ ভাবে টান অনুভব করে। আসলে একসময় তাকে সব ছেড়ে চলে যেতে হয় বলেই হয়তো এই রকম মনে হয়। আমার ক্ষেত্রে নাম তো পরিবর্তন হওয়ার ছিলো না, আমিই স্বইচ্ছায় ইসকুল জীবনে ত্যাগ করেছিলাম পিতৃদত্ত পদবী। এখন হঠাৎই নিজের মন খারাপ লাগছে। আমার নামটা আম্মুর দেওয়া আর আমার নামটা আমার ভীষন পি্রয় ।
ফারহা ইয়াসমিন -- প্রস্ফুটিত গোলাপ।
যখন পুরস্কারের জন্য পুরো নাম ঘোষিত হতো, কি ভালোই না লাগতো। আমিই তারপর নামটা কাটাছেঁড়া করে কখনো ফারহা ইয়াসমিন কখনো বা ফারহা কাজী লিখতে শুরু করি। কিন্তু আমার পুরো নাম ছাড়া আমি যে ভীষন ভাবে অপূর্ণ আজকেই হঠাৎ মনে হল। মেয়েরা বড়ো হয়ে গেলে বোধহয় বাবা দেওয়া সব কিছুর প্রতিই ভীষণ ভাবে টান অনুভব করে। আসলে একসময় তাকে সব ছেড়ে চলে যেতে হয় বলেই হয়তো এই রকম মনে হয়। আমার ক্ষেত্রে নাম তো পরিবর্তন হওয়ার ছিলো না, আমিই স্বইচ্ছায় ইসকুল জীবনে ত্যাগ করেছিলাম পিতৃদত্ত পদবী। এখন হঠাৎই নিজের মন খারাপ লাগছে। আমার নামটা আম্মুর দেওয়া আর আমার নামটা আমার ভীষন পি্রয় ।
ফারহা ইয়াসমিন -- প্রস্ফুটিত গোলাপ।
ভারতের উন্নতি এবার ঠেকায় কে?
একটা জিনিস মোটামুটি প্রমানিত , আমরা মানে ভারতীয়দের দেশপে্রমের চুলকানি
বাড়ে একমাত্র পাকিস্তানের প্রসঙ্গে। কি ভাগ্যিস পাকিস্তান ছিল, নইলে এত
দেশপে্রমীদের খুঁজে পাওয়ায় যেতো না। একটা ধন্যবাদ তো এই জন্য অবশ্যই
প্রাপ্য পাকিস্তানের। এদের অবশ্য দেশের সমস্যা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত হতে
দেখা যায় না। যেমন ধরো, সম্প্রতি কালের শ্রমিক বিল নিয়ে কেউ চিন্তিতই নয়,
আরে ধুর ঐসব ছোটোলোক নোংরা লোকেদের নিয়ে কে ভাবে? কি হবে দেশের জনসংখ্যার
অর্ধেক below poverty line এর নিচে আছে ভেবে? কি হবে এটা ভেবে যে
টাকার দাম কমছে। অথবা 40% মানুষের বাড়িতে শৌচাগার নেই। শালা , এসব নিয়ে
কোন গাধা ভাবে বা জানার চেষ্টা করে? তার থেকে অনেক বেশি দরকারি
পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা উগরিয়ে নিজেকে মহান দেশপে্রমী প্রমাণ করা। আমি
আবার খুব একটা দেশপে্রমী নই, আমার কাছে পাকিস্তানের থেকেও ঢের বেশী ঘৃণার
পাত্র বি্রটেন, যে আমাদের দেশটাতে সাম্প্রদায়িকতার বীজ পুঁতে দিয়ে গেছে,
আমি ঢের বেশি ঘৃণা করি আমেরিকাকে যে কিনা নিজের দেশের অর্থনীতি মজবুত করার
জন্য দেশ গুলোর মধে্য যুদ্ধ লাগায়। দেশ ভাগের পরেই সব বেইমানগুলো পাকিস্তান
আর বাংলাদেশ চলে গেছিল, এখন তো আবার মোদির আচ্ছে দিন এসে গেছে, কৃষক
আত্মহত্যার থেকে অনেক বেশি দরকারি কার্গিল যুদ্ধের বিজয়দিবস পালন। জনসংখ্যা
গণনা হচ্ছে ধর্মের উপর ভিত্তি করে, তখন আবার এই দেশপে্রমীদের বক্তব্য
বির্তকিত বিষয় নিয়ে আলোচনা বাপু পোষায় না। আমার ভারতের উন্নতি এবার ঠেকায়
কে?
টক ও না , ঝাল ও না
জাম্বুরা বলে একটা ফল হয়, কেউ কি সেটা জানো? এটা আসলে আমাদের খুব একটা
চেনা ফল। এটাকে আমরা সবাই বাতাবি লেবু বলেই চিনি। বাংলাদেশের মানুষরা
বাতাবি লেবুকে জাম্বুরা ফল বলে। গোলাপি রঙের টক মিষ্টি ফলটি গোলমরিচ,
বিটনুন, লবণ , মরিচ, ধনেপাতা সহযোগে খেতে অসাধারণ।
স্থান কাল বিশেষে ভাষার তারতম্য বাংলার জেলায় জেলায় দেখা যায়। যেমন ধরো বর্ধমান, বাঁকুড়ার গ্রাম গুলোতে পেয়ারাকে আঞ্জির বলে। আবার বীরভূমে এই পেয়ারাকেই আমসুপুরি বলে। আমার মামার বাড়ি বাঁকুড়াতে বেদানাকে ডালিম বলা হয়। এই ডালিম কথাটা শুনলেই আমার একটা ছোটোবেলায় পড়া রূপকথায় পড়া রাজকুমারের কথা মনে পড়ে । সেই যে ছিল না? একটা রাজপুত্র জন্মালো রানীর কোল আলো করে। ডালিম ফুলের মতো তার গায়ের রং। ডাইনির অভিশাপে দিনের বেলা ডালিম ফুল হয়ে যায় সে , আর রাতের বেলা মানব শিশু। ছোটোবেলায় আমি ভাবতাম আমিও বোধহয় কোনো রাজকুমারী। এত্তো মিষ্টি একটা মেয়ে রাজকুমারী না হয়ে যায়ই না।
কিন্তু পরে রিয়ালাইজ করলাম আমি রাজকুমারী বটে, তবে মিষ্টি মোটেই নয়। সাংঘাতিক টক ঝাল ।
স্থান কাল বিশেষে ভাষার তারতম্য বাংলার জেলায় জেলায় দেখা যায়। যেমন ধরো বর্ধমান, বাঁকুড়ার গ্রাম গুলোতে পেয়ারাকে আঞ্জির বলে। আবার বীরভূমে এই পেয়ারাকেই আমসুপুরি বলে। আমার মামার বাড়ি বাঁকুড়াতে বেদানাকে ডালিম বলা হয়। এই ডালিম কথাটা শুনলেই আমার একটা ছোটোবেলায় পড়া রূপকথায় পড়া রাজকুমারের কথা মনে পড়ে । সেই যে ছিল না? একটা রাজপুত্র জন্মালো রানীর কোল আলো করে। ডালিম ফুলের মতো তার গায়ের রং। ডাইনির অভিশাপে দিনের বেলা ডালিম ফুল হয়ে যায় সে , আর রাতের বেলা মানব শিশু। ছোটোবেলায় আমি ভাবতাম আমিও বোধহয় কোনো রাজকুমারী। এত্তো মিষ্টি একটা মেয়ে রাজকুমারী না হয়ে যায়ই না।
কিন্তু পরে রিয়ালাইজ করলাম আমি রাজকুমারী বটে, তবে মিষ্টি মোটেই নয়। সাংঘাতিক টক ঝাল ।
এ কোন স্বাধীনতা?
আনন্দবাজারে প্রকাশিত "রিফিউজি" নামে লেখাতে একজন না বাংলাদেশী না ভারতীয় বাঙালির আক্ষেপ
'কী একটা দেশভাগ হল! বলতেন, দেখ, আমি আমার জন্মভূমিকে ভারত, পূর্ব পাকিস্তান আর বাংলাদেশ— এই তিনটে নামে দেখলাম।'
কষ্ট হল। দেশভাগটার সত্যিই কি খুব দরকার ছিল? আমার নানাভাই, নানিজান এবং অজস্র আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে পাসপোর্ট লাগবে কেন? কেন ওপার বাংলার অজস্র লোকের জন্মভূমি ভারত হওয়া সত্বেও এবং এপার বাংলার অগুনতি লোকের জন্মভূমি পূর্ব বাংলা হওয়া সত্বেও নিজ জন্মভূমিতে নিজের ইচ্ছেমত পা রাখতে পারবে না?
জন্মভূমির টান কি অগ্রাহ্য করা যায়? বোধহয় কখনোই নয়, নইলে আশি বর্ষীয়া আমার আম্মুর ফুফুমনি আমার নানিজান কেন কাঁদেন ভারতে আসার জন্য? একটাই কারন , সেটা হল
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী।
কষ্ট হয়। এই অদ্ভূত স্বাধীনতা বোধহয় কেউ চায়নি। এই কষ্ট মেটবার নয় বোধহয়। একটা জাতিকে ভেঙে দুটুকরো করে মেরুদন্ডটাই ভেঙে দেওয়া কোন স্বাধীনতা?
'কী একটা দেশভাগ হল! বলতেন, দেখ, আমি আমার জন্মভূমিকে ভারত, পূর্ব পাকিস্তান আর বাংলাদেশ— এই তিনটে নামে দেখলাম।'
কষ্ট হল। দেশভাগটার সত্যিই কি খুব দরকার ছিল? আমার নানাভাই, নানিজান এবং অজস্র আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে পাসপোর্ট লাগবে কেন? কেন ওপার বাংলার অজস্র লোকের জন্মভূমি ভারত হওয়া সত্বেও এবং এপার বাংলার অগুনতি লোকের জন্মভূমি পূর্ব বাংলা হওয়া সত্বেও নিজ জন্মভূমিতে নিজের ইচ্ছেমত পা রাখতে পারবে না?
জন্মভূমির টান কি অগ্রাহ্য করা যায়? বোধহয় কখনোই নয়, নইলে আশি বর্ষীয়া আমার আম্মুর ফুফুমনি আমার নানিজান কেন কাঁদেন ভারতে আসার জন্য? একটাই কারন , সেটা হল
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী।
কষ্ট হয়। এই অদ্ভূত স্বাধীনতা বোধহয় কেউ চায়নি। এই কষ্ট মেটবার নয় বোধহয়। একটা জাতিকে ভেঙে দুটুকরো করে মেরুদন্ডটাই ভেঙে দেওয়া কোন স্বাধীনতা?
মন ভালো করা মূহুর্তরা হঠাৎ করেই আসে
অফিস যেতে বরাবরই আমাকে অনেক এনার্জি খরচ করতে হয়। সকালে কোনোদিনই উঠতে
পারি না আমি, বেলা এগারটা বারোটায় উঠে আমি মনকে প্রস্তুত করতে থাকি অফিস
যাওয়ার জন্য। এখনতো বড়ো হয়ে গেছি আমি (যদিও সবাই বলে বয়সটাই বেড়েছে শুধু,
মনের দিক থেকে সেই পুঁচকি পিউ টাই আছে। আরে আফটার অল বয়স শুধু সংখ্যা মাত্র
, মনটা সজীব রাখা খুব দরকার জীবনে। নইলে পাখি , ফুল এমনি রাস্তার কুকুরটা
দেখেও আনন্দ কে পাবে বলোতো? ) তাই কেউ বলার নেই, পিউমনি গো উঠে পর মা,
ইসকুল আছে। তাই নিজে নিজেই উঠে পড়ি আমি। তাপ্পর নিজেই নিজেকে বলি....... পিউমনি উঠে পড়। অফিস যেতে হবে।
না .... আর একটু ঘুমাই.... প্লীজ।
এরপর কিন্তু দেরী হয়ে যাবে আর তখন কিন্তু কেউ বাঁচাতে পারবে না তোমায়।
অনেক কষ্টে চোখ মেলে উঠে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হতে থাকি আমি । এটাই আমার দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবন।
আজকেও কষ্ট করে উঠে অফিস রওনা দিলাম। মনটা আজকে বেশ খারাপ। আসলেই ভীষণ রকম খারাপ।
না .... আর একটু ঘুমাই.... প্লীজ।
এরপর কিন্তু দেরী হয়ে যাবে আর তখন কিন্তু কেউ বাঁচাতে পারবে না তোমায়।
অনেক কষ্টে চোখ মেলে উঠে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হতে থাকি আমি । এটাই আমার দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবন।
আজকেও কষ্ট করে উঠে অফিস রওনা দিলাম। মনটা আজকে বেশ খারাপ। আসলেই ভীষণ রকম খারাপ।
জীবনে যত মনখারাপ কাছের মানুষের কাছেই তুমি পাবে। যতই ভালবাসো, একসময় না
একসময় দুঃখ পাবেই। এটাই জগতের নিয়ম। আসলে কাছের মানুষগুলোর কাছে প্রত্যাশা
অনেক বেশি থাকে আমাদের। আর সেটা পূর্ণ করা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটা
প্রতিটা মানুষের জন্য প্রযোজ্য । যখন তুমি সেই কাছের মানুষগুলো থেকে একদিন
দূরে চলে যাবে , তখন তোমার মনে পরবে এক একটা মূহুর্ত। তখন তুমিও কষ্ট পাবে।
জীবন এই ভাবেই সব কিছুর হিসেব রাখে।
বাসে বেশ ভীড় ছিল । খানিক পরে বসতে জায়গা পেয়ে মোবাইলটা বের করে ফেসবুকটা খুলে দেখছি । আমি খুব বেশি ফোন অ্যাডিক্টেড। চেষ্টা করেও দূরে থাকতে পারিনা। জানি পারবো না, তবু মাঝেমধ্যেই চেষ্টা করি । খানিকক্ষণ পরে আমার মনে হল কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। অতি চেনা কোনো অনুভূতি।
মেয়েরা অনেক অদ্ভূত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। প্রকৃতি তাদের এই ক্ষমতাগুলো দিয়েছে অবস্হার মোকাবিলা করার জন্য। কেউ কখনো তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে মেয়েরা ঠিকক বুঝতে পারে।
তাকিয়ে দেখলাম একটা বেশ সুন্দর দেখতে ছেলে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। বেশ অহঙ্কারের সাথে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ।
অদ্ভূত ক্ষমতাগুলির মধ্যে একটি হল মেয়েরা চট করে কোনো ব্যাপার থেকো নিজের মনকে ডাইভার্ট করতে পারে না।
ব্যাস! আরকি। আমিও লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে শুরু করলাম ছেলেটাকে। এটাকেই কি ঝারি মারা বলে? কে জানে!!
যখনই তাকিয়ে দেখি, ছেলেটা আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
আজব সমস্যা।
তারপর আমি একটু রেগেই ভীষণ কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে।
ওমা, দেখি সেও ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে।
ভীষণ ভীষণ রাগ হল। আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকানো!! এত্তো সাহস?
দিলাম বেশ করে ভেংচি কেটে। আহা কতদিন ভেংচি কাটি না। ভারি আনন্দ হল। ছেলেটা কিন্তু মহা টেঁটিয়া। সেই তাকিয়েই থাকল আমার দিকে। আমিও আড়চোখে দেখতে থাকলাম। বাসে আরতির গান বাজছিল। একসময় বেজে উঠল 'চোখে চোখে কথা বলো , মুখে কিছু বলো না'।
আমি আর থাকতে পারলাম না, হেসেই ফেল্লাম। আমাকে হাসতে দেখে ছেলেটা বেশ ঘাবড়ে কাঁচুমাচু মুখ করে তাকাচ্ছে। নারকেল বাগান আসতেই ছেলেটা নেমে গেল।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি।মন বলছে ১০০ পার্সেন্ট ছেলেটা একবার পিছন ঘুরে তাকাবেই।
শাহরুখ খানের মুভির সেই দৃশ্যের মতো 'পালাট, পালাট '। একটু এগিয়ে যাওয়ার পর ছেলেটা পিছনে ঘুরে তাকালো। এবার আমি হাসলাম... রাগ করে নয়। মন থেকে হাসি। আমার মন ভালো করার জন্য এটুকু তো অবশ্যই প্রাপ্য।
বাইরে তখন মেঘের ফাঁকে রোদ হাসছে , আমার মতোই।
বাসে বেশ ভীড় ছিল । খানিক পরে বসতে জায়গা পেয়ে মোবাইলটা বের করে ফেসবুকটা খুলে দেখছি । আমি খুব বেশি ফোন অ্যাডিক্টেড। চেষ্টা করেও দূরে থাকতে পারিনা। জানি পারবো না, তবু মাঝেমধ্যেই চেষ্টা করি । খানিকক্ষণ পরে আমার মনে হল কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। অতি চেনা কোনো অনুভূতি।
মেয়েরা অনেক অদ্ভূত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। প্রকৃতি তাদের এই ক্ষমতাগুলো দিয়েছে অবস্হার মোকাবিলা করার জন্য। কেউ কখনো তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে মেয়েরা ঠিকক বুঝতে পারে।
তাকিয়ে দেখলাম একটা বেশ সুন্দর দেখতে ছেলে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। বেশ অহঙ্কারের সাথে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ।
অদ্ভূত ক্ষমতাগুলির মধ্যে একটি হল মেয়েরা চট করে কোনো ব্যাপার থেকো নিজের মনকে ডাইভার্ট করতে পারে না।
ব্যাস! আরকি। আমিও লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে শুরু করলাম ছেলেটাকে। এটাকেই কি ঝারি মারা বলে? কে জানে!!
যখনই তাকিয়ে দেখি, ছেলেটা আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
আজব সমস্যা।
তারপর আমি একটু রেগেই ভীষণ কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে।
ওমা, দেখি সেও ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে।
ভীষণ ভীষণ রাগ হল। আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকানো!! এত্তো সাহস?
দিলাম বেশ করে ভেংচি কেটে। আহা কতদিন ভেংচি কাটি না। ভারি আনন্দ হল। ছেলেটা কিন্তু মহা টেঁটিয়া। সেই তাকিয়েই থাকল আমার দিকে। আমিও আড়চোখে দেখতে থাকলাম। বাসে আরতির গান বাজছিল। একসময় বেজে উঠল 'চোখে চোখে কথা বলো , মুখে কিছু বলো না'।
আমি আর থাকতে পারলাম না, হেসেই ফেল্লাম। আমাকে হাসতে দেখে ছেলেটা বেশ ঘাবড়ে কাঁচুমাচু মুখ করে তাকাচ্ছে। নারকেল বাগান আসতেই ছেলেটা নেমে গেল।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি।মন বলছে ১০০ পার্সেন্ট ছেলেটা একবার পিছন ঘুরে তাকাবেই।
শাহরুখ খানের মুভির সেই দৃশ্যের মতো 'পালাট, পালাট '। একটু এগিয়ে যাওয়ার পর ছেলেটা পিছনে ঘুরে তাকালো। এবার আমি হাসলাম... রাগ করে নয়। মন থেকে হাসি। আমার মন ভালো করার জন্য এটুকু তো অবশ্যই প্রাপ্য।
বাইরে তখন মেঘের ফাঁকে রোদ হাসছে , আমার মতোই।
Wednesday, 12 August 2015
খুশির ঈদ
ঈদ আসছে। খুশির ঈদ। আমিও খুশি। তবে এখন বড়ো হয়ে গেছি। এখন আগের মতো খুশি
হয়না। ইসকুল থেকে আসার সময় যেদিন প্যান্ডেলের প্রথম বাঁশটা দেখতে পেতাম,
মনটা আনন্দে ভরে উঠত। লাফাতে লাফাতে বাড়ি আসতাম। প্রথম রোজা যেদিন শুরু হতো
সেদিন থেকেই নিউ-য়ের বায়না শুরু হতো। কবে যাব ঈদের বাজার করতে। আম্মু বলতো
আজ যাব কাল যাব। তারপর আম্মু একদিন বেরোতো বাজার করতে.. অনেক দোকান ঘুরে
সুন্দর অথচ সস্তা জামা কাপড় কিনে বাড়ি ফিরতো। এক-একবার দেরি হয়ে যেতো।
পাড়ার মোম্স্ , মিমন, জুঁই দের শপিং শেষ, অথচ আমাদের হয়নি। কি অবস্থা। আসলে
আব্বু হয়তো টাকা জোগাড় করতে পারেনি। অন্য সকলের আব্বুর মতো আমার আব্বুর তো
চাকরি ছিল না, তাই মাসের শেষে টাকা আসবেই তার গ্যারান্টি ছিলো না। সে কথা
তো তখন বুঝতে পারতাম না। টাকা পয়সার টানাটানি হলেও কোনোদিন টের পেতাম না,
আব্বু আম্মু কোনোদিন টেরই পেতে দেয়নি। তাই দেরি হলে চিন্তা করতাম এবারে মনে
হয় ভালো জামাটা কেনা হবে না, কারন রোজার শেষের দিকে সবার শপিং যখন শেষ,
তখন তো ভালো জিনিস টা আর থাকবেই না। কিন্তু দেরি হলেও প্রতিবার পছন্দসই
জামাটাই পেতাম। সাথে ম্যাচিং জুতো, ম্যাচিং ক্লীপ। সে কি আনন্দ। বাড়িতে যেই
আসতো উৎসাহ ভরে দেখাতাম নতুন কেনা জামা কাপড়। আব্বুআম্মু একটা জামা দিতো
আর দাদাভাই একটা। দুটো জামা হতো। যদ্দিন দাদাভাই বেঁচে ছিল ঈদে দুটো করে
জামা হতো। ছোটো বেলা থেকেই একটা জিনিস নিয়ে আমার দুঃখ ছিল, আমার চাচা বা
কাকু ছিল না। আমার আব্বু একটাই ছেলে। চাচু বা কাকু থাকলে আমাদেরও তিনটে
চারটে নূতন জামা হত। আমাদের আশে পাশে সবার চাচা কাকা ছিলো। সবাই ঈদের জামা
কাপড় দেখানোর সময় বলতো এটা আমার বড়ো চাচু দিয়েছে, এটা ছোটো চাচু। আর
আমাদের তো শুধু আব্বু আছে, তাই অতোগুলো হতো না। আমার মনে হত ইস্ আমার কেন
চাচু নেই। অ্যাটলিস্ট একটাও হতো। আমার বড়ো দাদাও নেই যে আমাকে শপিং করাবে,
তাই যে বছর আবিদ ভাইয়া আমাকে ঈদের জন্য নূতন জামা কিনে দিয়েছিল লাইফ স্টাইল
থেকে আমি প্রচুর খুশি হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল ইস আমারো একটা বড়ো ভাই আছে
তবে।
আমরা যখন দুঃখ করতাম আমাদের মোটে একটা জামা। তখন আম্মু আব্বু আমাদের একটাই কথা বলতো, তোমাদের তো একটাও নূতন জামা হচ্ছে। এমন অনেকে আছে যাদের একটাও জামা কাপড় হয়না। তাদের কথা ভেবে কখনো দেখবে। সতি্যই তো! যাদের একটাও জামা হয়না, কত খারাপ লাগে তাদের। তাদেরও তো ইচ্ছে হয় একটা নতুন জামার!
ঈদের সময় আমাদের বাড়ি থেকে কোনদিন কোনো গরীব মানুষকে খালি হাতে ফিরতে দেখিনি, একমাস আগে থেকে লোকজন আসতে থাকে নূতন জামা কাপড়ের আশায়, টাকা পয়সার আশায়। সবাই কিছুনা কিছু পায়।
আব্বু আম্মু কোনোদিন কোনো অবস্থাতেই তাদের খালি হাতে ফেরায়নি, এমনকি আর্থিক সমস্যার দিনেও খালি হাতে কেউ যায়নি। আব্বু আম্মু কিন্তু ঈদে নূতন জামা কাপড় কখনো কিনতো না, মামারা কখনো দিলে আলাদা কথা। এখন তো বড়ো হয়ে গেছি, এখন আর আব্বু আম্মুরা নূতন জামা কিনে দেয় না, এখন আমরা দুই বোনই আম্মু হয়ে গেছি, আমরাই জামা কাপড় কিনে দিই আব্বুআম্মুকে ।
আমরা দুই বোন দুই বোনকে নূতন জামা কিনে দিই। আমরাই আমাদের চাচু, কাকু, ফুফুমনি, বোন, বন্ধু সব।
নিউ আর কচি তোদেরকে আমি অনেক ভালোবাসি। বলতে পারি না। তাই লিখলাম। তোদেরকে অনেক সময় হার্ট করে ফেলি। আসলে যাদের আমরা ভালোবাসি তাদেরকেই সবথেকে দুঃখ দিই।
I Am sorry and I love you!
তোরা ছাড়া কেউ কি আছে আমার? আমরা একে অপরের পরিপূরক, দুঃখ আনন্দের সাথী। আবিদ ভাইয়া তোমাকেও আমি ভীষণ ভালোবাসি, তুমি কি জানো তুমি আমার দেখা সেরা পে্রমিক।
এই ঈদে আমরা সবাই আনন্দ করবো সব খারাপ লাগা ভুলে।
সবাই ভালো থাকুক, সাথে আমরাও।
কচি কচি সব মন ঈদে একটা হলেও যেন নূতন জামা পায়। হে আল্লাহ্পাক , আমি নামাজ, রোজা করিনা কিন্তু তোমাকে বিশ্বাস করি, আর বিশ্বাস রাখি মানুষের উপর। আমরা কি পারি না প্রতে্যকে একজন করে হলেও যেন একটা শিশু, গরীব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে? নিশ্চয়ই পারি।
সবাই খুশি থাকুক আর আনন্দে থাকুক।
ঈদ আসছে। আর সাতটা দিন বাকি।
লাচ্ছা, সিমাই, ফিরনি, বিরিয়ানি, নতুন জামা, আতরের গন্ধে ম ম খুশির ঈদ।
আমরা যখন দুঃখ করতাম আমাদের মোটে একটা জামা। তখন আম্মু আব্বু আমাদের একটাই কথা বলতো, তোমাদের তো একটাও নূতন জামা হচ্ছে। এমন অনেকে আছে যাদের একটাও জামা কাপড় হয়না। তাদের কথা ভেবে কখনো দেখবে। সতি্যই তো! যাদের একটাও জামা হয়না, কত খারাপ লাগে তাদের। তাদেরও তো ইচ্ছে হয় একটা নতুন জামার!
ঈদের সময় আমাদের বাড়ি থেকে কোনদিন কোনো গরীব মানুষকে খালি হাতে ফিরতে দেখিনি, একমাস আগে থেকে লোকজন আসতে থাকে নূতন জামা কাপড়ের আশায়, টাকা পয়সার আশায়। সবাই কিছুনা কিছু পায়।
আব্বু আম্মু কোনোদিন কোনো অবস্থাতেই তাদের খালি হাতে ফেরায়নি, এমনকি আর্থিক সমস্যার দিনেও খালি হাতে কেউ যায়নি। আব্বু আম্মু কিন্তু ঈদে নূতন জামা কাপড় কখনো কিনতো না, মামারা কখনো দিলে আলাদা কথা। এখন তো বড়ো হয়ে গেছি, এখন আর আব্বু আম্মুরা নূতন জামা কিনে দেয় না, এখন আমরা দুই বোনই আম্মু হয়ে গেছি, আমরাই জামা কাপড় কিনে দিই আব্বুআম্মুকে ।
আমরা দুই বোন দুই বোনকে নূতন জামা কিনে দিই। আমরাই আমাদের চাচু, কাকু, ফুফুমনি, বোন, বন্ধু সব।
নিউ আর কচি তোদেরকে আমি অনেক ভালোবাসি। বলতে পারি না। তাই লিখলাম। তোদেরকে অনেক সময় হার্ট করে ফেলি। আসলে যাদের আমরা ভালোবাসি তাদেরকেই সবথেকে দুঃখ দিই।
I Am sorry and I love you!
তোরা ছাড়া কেউ কি আছে আমার? আমরা একে অপরের পরিপূরক, দুঃখ আনন্দের সাথী। আবিদ ভাইয়া তোমাকেও আমি ভীষণ ভালোবাসি, তুমি কি জানো তুমি আমার দেখা সেরা পে্রমিক।
এই ঈদে আমরা সবাই আনন্দ করবো সব খারাপ লাগা ভুলে।
সবাই ভালো থাকুক, সাথে আমরাও।
কচি কচি সব মন ঈদে একটা হলেও যেন নূতন জামা পায়। হে আল্লাহ্পাক , আমি নামাজ, রোজা করিনা কিন্তু তোমাকে বিশ্বাস করি, আর বিশ্বাস রাখি মানুষের উপর। আমরা কি পারি না প্রতে্যকে একজন করে হলেও যেন একটা শিশু, গরীব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে? নিশ্চয়ই পারি।
সবাই খুশি থাকুক আর আনন্দে থাকুক।
ঈদ আসছে। আর সাতটা দিন বাকি।
লাচ্ছা, সিমাই, ফিরনি, বিরিয়ানি, নতুন জামা, আতরের গন্ধে ম ম খুশির ঈদ।
হু হু বাবা জানো না তো আমার ক্ষ্যামতা।
প্রবলেমের সাথে আমার মিতালি জন্ম থেকেই। আমার জীবনে কোনো কাজ সুষ্ঠু ভাবে
হলোনা। আল্লাহমিঞা আমার লাইফে সমস্যাকে লেজুড় হিসেবে জুড়ে দিয়েছে। টেনশন
নিয়ে নিয়ে এই বয়সেই মাথার চারটে চুল পেকে গেছে, বাকি গুলোও যে কোনদিন
নির্বাণ লাভ করতে পারে। যেদিন কোনো সমস্যা থাকে না সেদিন চিন্তায় পড়ে যাই,
হলো কি? আল্লাহমিঞার শরীর ঠিক আছে তো! আজ আমার লাইফ এতো স্মুদলি কাটলো কি
ভাবে।
সেদিনকেও টেনশন একটুস কম ছিল, মনে মনে ভাবছিলুম আজকে ছোটো খাটো সমস্যার উপর দিয়ে গেছে বাবা! একদম টেনশন ছাড়া দিনও নয়, আবার খুব বেশি টেনশনও ছিল না।
কিন্তু কোথায় কি! আমার লাইফ এতো নিস্তরঙ্গ হতেই পারে না!
ফ্ল্যাটে ফিরেই আমার রুমে দেখি অদ্ভুত আওয়াজ, কেমন হড়পা বান আসার শব্দ। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম অ্যাটাচ্ড বাথরুম আওয়াজের উৎস। তারপর দেখলাম বাথরুমের জল নিকাশীর পাইপ হতে হড়হড় করে জল ঢুকছে। কি মুসিবত! ফ্ল্যাটে সেদিন ভাই ছিলো, তাকে বলতে সে বললে জল ঢুকছে তো আমি কি করব! সত্যিই তো, ও কি করবে! আদরে বাঁদর হয়েছে একটা।
অগত্যা আমিই গেলাম সিকিউরিটির কাছে, তাকে গিয়ে বললাম সমস্যার কথা। তিনি বললেন পরের দিন ব্যাপারটা সরেজমিনে তদন্ত নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঐ যে আমি , কিছুতেই ভরসা করতে পারি না। অতএব তাকে বগলদাবা করে চল্লুম আমাদের ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের নিচে আসতেই হড়হড় করে জলের শব্দ । সিকিউরিটি ব্যাপারটার গুরুত্ব অনুধাবন করে বললো কেউ বোধহয় ভুলবশত জলের কল খুলে রেখেছে। অতএব কে এই ভুলটা করেছে সেই নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেল উপরের ফ্ল্যাটে কেউ নেই, অতএব যা কিছু হয়েছে ছাতেই হয়েছে। দুজন মিলে ছাতে গিয়ে দেখলাম চারিদিকে জল থইথই। পাইপের জয়েন্ট খুলে গেছে, হড়হড় করে জল বেরোচ্ছে। এই ভাবে চললে কিছুক্ষণের মধে্যই ট্যাঙ্ক থেকে সব জল বেরিয়ে যাবে আর সারারাত জলের সমস্যা নিয়ে কাটাতে হবে। সিকিউরিটি সব কিছু দেখে শুনে বললো
আজকের মতো জল স্টোর করে রাখুন।কাল সকালে দেখা যাবে।
শুনেই আমি ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বললাম অদ্ভূত কথা বলছেন তো! আমি এখন অতো বালতি পাবো কোথায়? আপনি দেবেন? সারারাত কি বিনা জলে কাটাবো? খাওয়ার জল অবধি নেই বাড়িতে। আপনি কিছু একটা ব্যবস্থা করুন, দরকার পড়লে প্রোমোটারকে ফোন করুন, কিন্তু আজকেই করতে যা করার করতে হবে, নইলে আমাকে বালতি দিতে হবে। বেচারা সিকিউরিটি টেনশনে, বালতির জন্য। প্রোমোটারকে ফোন করে বিশেষ লাভ হলনা, সে ব্যাটা মহা বদ, পয়সা ছাড়া কিছু বোঝে না। অবশেষে আমিই প্লাম্বারকে ফোন করলাম, তাকে অনুরোধ করেও লাভ হলনা, অতএব তাকে আচ্ছাসে ঝেড়ে ফোনটা রেখে দিলাম। সিকিউরিটি বেচারা কাঁচুমাচু মুখ করে আমাকে বললো দেখছেন তো আপনার কথাই শুনলে না, আমাদের তো পাত্তায় দেয় না।
শুনে বেশ রাগ হলো আমার। ভেবেছে কি আমাকে, চেনে না তো আমি কি জিনিষ। দরকার পরলে জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ সব করতে পারি, তার উপর ইঞ্জিনিয়ার , এক রাতে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে গেলাম তো সামান্য এই পাইপ সমস্যার সমাধান করতে পারবো না? যেমন ভাবা তেমন কাজ, অমনি কাজে লেগে পরলাম।
পাইপের ভাল্ভ বন্ধ করে জলের ফোর্স কমিয়ে খুলে যাওয়া পাইপের অংশটুকু লাগিয়ে কাপড়, দড়ি ইত্যাদি দিয়ে বেশ ভালো করে আটকে সেদিন রাতের মতো ব্যবস্থা হলো। যদি প্লাম্বিং এর জিনিষ পত্র থাকতো তবে ঐ হতচ্ছাড়া প্লাম্বারের অহংকার চূর্ণ করে করে প্লাম্বিংয়ের ব্যবসা খুলতাম। মিস্ত্রী পেশার পর প্লাম্বিং পেশাটাও হাতে রইল। আহা চাকরি বাকরি চলে গেলে করে কম্মে খেতে পারবো।
মাঝেমধ্যে ভাবি আর নিজেই খুশি হয়ে যাই, আমার মধে্য কি অপরিসীম প্রতিভা। শুধু বেলা এগারোটার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারি না তাই, নইলে দেখিয়ে দিতুম আরকি।
প্রতিভার বিচ্ছুরন, একদম পি্রজমের ভিতর আলো যাওয়ার মতো।
সেদিনকেও টেনশন একটুস কম ছিল, মনে মনে ভাবছিলুম আজকে ছোটো খাটো সমস্যার উপর দিয়ে গেছে বাবা! একদম টেনশন ছাড়া দিনও নয়, আবার খুব বেশি টেনশনও ছিল না।
কিন্তু কোথায় কি! আমার লাইফ এতো নিস্তরঙ্গ হতেই পারে না!
ফ্ল্যাটে ফিরেই আমার রুমে দেখি অদ্ভুত আওয়াজ, কেমন হড়পা বান আসার শব্দ। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম অ্যাটাচ্ড বাথরুম আওয়াজের উৎস। তারপর দেখলাম বাথরুমের জল নিকাশীর পাইপ হতে হড়হড় করে জল ঢুকছে। কি মুসিবত! ফ্ল্যাটে সেদিন ভাই ছিলো, তাকে বলতে সে বললে জল ঢুকছে তো আমি কি করব! সত্যিই তো, ও কি করবে! আদরে বাঁদর হয়েছে একটা।
অগত্যা আমিই গেলাম সিকিউরিটির কাছে, তাকে গিয়ে বললাম সমস্যার কথা। তিনি বললেন পরের দিন ব্যাপারটা সরেজমিনে তদন্ত নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঐ যে আমি , কিছুতেই ভরসা করতে পারি না। অতএব তাকে বগলদাবা করে চল্লুম আমাদের ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের নিচে আসতেই হড়হড় করে জলের শব্দ । সিকিউরিটি ব্যাপারটার গুরুত্ব অনুধাবন করে বললো কেউ বোধহয় ভুলবশত জলের কল খুলে রেখেছে। অতএব কে এই ভুলটা করেছে সেই নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেল উপরের ফ্ল্যাটে কেউ নেই, অতএব যা কিছু হয়েছে ছাতেই হয়েছে। দুজন মিলে ছাতে গিয়ে দেখলাম চারিদিকে জল থইথই। পাইপের জয়েন্ট খুলে গেছে, হড়হড় করে জল বেরোচ্ছে। এই ভাবে চললে কিছুক্ষণের মধে্যই ট্যাঙ্ক থেকে সব জল বেরিয়ে যাবে আর সারারাত জলের সমস্যা নিয়ে কাটাতে হবে। সিকিউরিটি সব কিছু দেখে শুনে বললো
আজকের মতো জল স্টোর করে রাখুন।কাল সকালে দেখা যাবে।
শুনেই আমি ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বললাম অদ্ভূত কথা বলছেন তো! আমি এখন অতো বালতি পাবো কোথায়? আপনি দেবেন? সারারাত কি বিনা জলে কাটাবো? খাওয়ার জল অবধি নেই বাড়িতে। আপনি কিছু একটা ব্যবস্থা করুন, দরকার পড়লে প্রোমোটারকে ফোন করুন, কিন্তু আজকেই করতে যা করার করতে হবে, নইলে আমাকে বালতি দিতে হবে। বেচারা সিকিউরিটি টেনশনে, বালতির জন্য। প্রোমোটারকে ফোন করে বিশেষ লাভ হলনা, সে ব্যাটা মহা বদ, পয়সা ছাড়া কিছু বোঝে না। অবশেষে আমিই প্লাম্বারকে ফোন করলাম, তাকে অনুরোধ করেও লাভ হলনা, অতএব তাকে আচ্ছাসে ঝেড়ে ফোনটা রেখে দিলাম। সিকিউরিটি বেচারা কাঁচুমাচু মুখ করে আমাকে বললো দেখছেন তো আপনার কথাই শুনলে না, আমাদের তো পাত্তায় দেয় না।
শুনে বেশ রাগ হলো আমার। ভেবেছে কি আমাকে, চেনে না তো আমি কি জিনিষ। দরকার পরলে জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ সব করতে পারি, তার উপর ইঞ্জিনিয়ার , এক রাতে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে গেলাম তো সামান্য এই পাইপ সমস্যার সমাধান করতে পারবো না? যেমন ভাবা তেমন কাজ, অমনি কাজে লেগে পরলাম।
পাইপের ভাল্ভ বন্ধ করে জলের ফোর্স কমিয়ে খুলে যাওয়া পাইপের অংশটুকু লাগিয়ে কাপড়, দড়ি ইত্যাদি দিয়ে বেশ ভালো করে আটকে সেদিন রাতের মতো ব্যবস্থা হলো। যদি প্লাম্বিং এর জিনিষ পত্র থাকতো তবে ঐ হতচ্ছাড়া প্লাম্বারের অহংকার চূর্ণ করে করে প্লাম্বিংয়ের ব্যবসা খুলতাম। মিস্ত্রী পেশার পর প্লাম্বিং পেশাটাও হাতে রইল। আহা চাকরি বাকরি চলে গেলে করে কম্মে খেতে পারবো।
মাঝেমধ্যে ভাবি আর নিজেই খুশি হয়ে যাই, আমার মধে্য কি অপরিসীম প্রতিভা। শুধু বেলা এগারোটার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারি না তাই, নইলে দেখিয়ে দিতুম আরকি।
প্রতিভার বিচ্ছুরন, একদম পি্রজমের ভিতর আলো যাওয়ার মতো।
Friday, 12 June 2015
মনটা হঠাৎই ভালো হয়েছিল
বাসের জন্য অপেক্ষা করছি... বেলা গড়িয়ে বিকেল হলেও গরম কমছে না। আমি সাদা
রঙের কালো ফুটিফুটি দেওয়া একটা জামা পরেছি। অনেকেই বলেছে এই জামাটা পড়লেই
আমাকে নাকি পুরানো দিনের হিরোইন লাগে...! বেশ মজা লাগে শুনতে... ছোটো বেলায়
একটা পুরোনো হিন্দি সিনেমায় দেখেছিলাম প্রায় এই রকম একটা জামা পরে হিরোইন
টেনিস খেলছে। আর আশ্চর্যের কথা এই জামাটা পরলেই আমার ঐ সিনটার কথা মনে পড়ে
, আর ভীষণ টেনিস খেলতে ইচ্ছে করে। আমি একটু পাগল টাইপের আছি। ভীষণ রকম
অদ্ভুত ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে। একবার ইচ্ছে হয়েছিল মুরগি পোষার।
তো বাড়িতে মুরগি এলো , তিন ভাইবোনের তিনটে মুরগির বাচ্চা। আমার টা কালো,
নিউয়েরটা সাদার উপর কালো ফুটকিওয়ালা, আর কচির টা হলুদ রঙের। শহরে তো আর
গ্রামের মতো ফাঁকা জায়গা নেই মুরগি পোষার জন্য তাই আব্বু আবার তিন হাজার
টাকা খরচা করে একটা বিশাল খাঁচা কিনে দিল, তাতে অন্তত পঞ্চাশটা মুরগি ধরে।
আম্মু দেখে বেজায় খেপে গেলো। তিনটে মুরগির জন্য এত বড়ো খাঁচা! আমার
আম্মুর ধারণা আব্বুকে সবাই ঠকিয়ে দেয় কারণ আব্বু নাকি খুব বোকা। কোনো এক
অদ্ভুত কারণে স্ত্রীর কাছে স্বামী সবসময়ই বোকা!
সে যাইহোক মুরগির বাচ্চারা বড়ো হতেই পাঁচিলের উপরেই ইন্টারেস্ট দেখায় বেশি, অতো বড়ো খাঁচায় তাদের মন টেঁকে না কিছুতেই। সবাই সকাল হলেই পাঁচিলে উঠে পায়রাদের সাথে লাইন করে বসে থাকে। সারাদিন খায় দায় আর পাঁচিলে উঠে বসে থাকে। মুরগির বাচ্চাগুলো বড়ো হতেই তাদের লম্বা ঝুঁটি আর লম্বা লম্বা ঠ্যাং হয়ে গেল। আম্মু মুরগীর বাচ্চাগুলোর গঠন আর স্বভাব দেখে শুনে ডিক্লেয়ার করলো ওগুলো কোনোভাবেই মুরগি নয়, সব কটা মোরগ। শুধু কচির মুরগি বাচ্চাটা মুরগি হলেও হতে পারে। শুনে আমাদের হেবি দুঃখু। ডিম খাওয়ার ইচ্ছে সওওব মাটি। মোরগ হলেই কেটে কুটে খাওয়ার চান্স বেশি। খুব চিন্তায়, আম্মুর মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে না মোরগ গুলো কে বেশি দিন খাইয়ে দাইয়ে রেখে দেবে। যাই হোক এমনি করতে করতেই একদিন কচির মুরগি ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, ঐ দিন কচি দেশি মুরগির ডিম খেল ভাতের সাথে। আমি আর নিউ বসে বসে দেখলাম দুঃখ দুঃখ মুখ করে। ইসকুল থেকে এসেই আম্মুকে জিজ্ঞাসা করি আমাদের মুরগি ডিম পাড়লো কিনা, অবশেষে একদিন আমাদের দুজনের মুরগিই ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, খুব মজা।
সে তো গেলো ইচ্ছের কথা। তা যেটা বলছিলাম বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। বাস আসতে এখনো দেরি আছে। মন্দিরের মার্বেল বাঁধানো চাতালে বসে আছি, ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। দুটো শালিখ পে্রম করছে, একজন ঠোঁট দিয়ে আর একজনের মাথা চুলকে দিচ্ছে।
হঠাৎ একটা লোকের দিকে চোখ আটকে গেল। লোকটা আইসক্রিম খাচ্ছে, আইসক্রিমটার রংটা খুব সুন্দর... আকাশনীল রংয়ের!
দেখেই খুব ভালো লাগল, ইচ্ছে করলেই কিনে খাওয়া যেতো, কিন্তু ইচ্ছেটাই হচ্ছে না। লোকটার আইসক্রিম খাওয়া দেখছি হাঁ করে, লোকটা ভাবছে হয়তো " কি হ্যাংলা মেয়েরে বাবা।" আমার কখনও কোনো জিনিস ভালো লাগলে সেটা তখনি কিনি না, তাতে ভালো লাগাটাই নষ্ট হয়ে যায়, রেখে দিই পরে কখনও কিনবো বলে। ছোট্ট বেলায় একটা পুতুল খুব ভালো লেগেছিলো, অনেক দাম ছিল তাই আর কেনা হয়নি। এখনো দোকানটার সামনে গেলে দাঁড়িয়ে দেখি পুতুলটাকে। আমার মেয়েকে কিনে দেবো হয়তো কখনো।
আজকে আইসক্রিমটা কিনবো না, ভাল লাগা মুগ্ধতাটা জিইয়ে রাখব। অন্য হঠাৎ একদিন এমনি সুন্দর বিকেলে আকাশনীল আইসক্রিমটা কিনব, হয়তোবা তখন মেঘ জমবে আকাশে, কে জানে হয়তো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়বে। একটা মেয়ে আকাশনীল আইসক্রিম খেতে খেতে হারিয়ে যাবে ভীড়ের মাঝে।
সে যাইহোক মুরগির বাচ্চারা বড়ো হতেই পাঁচিলের উপরেই ইন্টারেস্ট দেখায় বেশি, অতো বড়ো খাঁচায় তাদের মন টেঁকে না কিছুতেই। সবাই সকাল হলেই পাঁচিলে উঠে পায়রাদের সাথে লাইন করে বসে থাকে। সারাদিন খায় দায় আর পাঁচিলে উঠে বসে থাকে। মুরগির বাচ্চাগুলো বড়ো হতেই তাদের লম্বা ঝুঁটি আর লম্বা লম্বা ঠ্যাং হয়ে গেল। আম্মু মুরগীর বাচ্চাগুলোর গঠন আর স্বভাব দেখে শুনে ডিক্লেয়ার করলো ওগুলো কোনোভাবেই মুরগি নয়, সব কটা মোরগ। শুধু কচির মুরগি বাচ্চাটা মুরগি হলেও হতে পারে। শুনে আমাদের হেবি দুঃখু। ডিম খাওয়ার ইচ্ছে সওওব মাটি। মোরগ হলেই কেটে কুটে খাওয়ার চান্স বেশি। খুব চিন্তায়, আম্মুর মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে না মোরগ গুলো কে বেশি দিন খাইয়ে দাইয়ে রেখে দেবে। যাই হোক এমনি করতে করতেই একদিন কচির মুরগি ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, ঐ দিন কচি দেশি মুরগির ডিম খেল ভাতের সাথে। আমি আর নিউ বসে বসে দেখলাম দুঃখ দুঃখ মুখ করে। ইসকুল থেকে এসেই আম্মুকে জিজ্ঞাসা করি আমাদের মুরগি ডিম পাড়লো কিনা, অবশেষে একদিন আমাদের দুজনের মুরগিই ডিম পাড়লো। কি আনন্দ, খুব মজা।
সে তো গেলো ইচ্ছের কথা। তা যেটা বলছিলাম বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। বাস আসতে এখনো দেরি আছে। মন্দিরের মার্বেল বাঁধানো চাতালে বসে আছি, ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। দুটো শালিখ পে্রম করছে, একজন ঠোঁট দিয়ে আর একজনের মাথা চুলকে দিচ্ছে।
হঠাৎ একটা লোকের দিকে চোখ আটকে গেল। লোকটা আইসক্রিম খাচ্ছে, আইসক্রিমটার রংটা খুব সুন্দর... আকাশনীল রংয়ের!
দেখেই খুব ভালো লাগল, ইচ্ছে করলেই কিনে খাওয়া যেতো, কিন্তু ইচ্ছেটাই হচ্ছে না। লোকটার আইসক্রিম খাওয়া দেখছি হাঁ করে, লোকটা ভাবছে হয়তো " কি হ্যাংলা মেয়েরে বাবা।" আমার কখনও কোনো জিনিস ভালো লাগলে সেটা তখনি কিনি না, তাতে ভালো লাগাটাই নষ্ট হয়ে যায়, রেখে দিই পরে কখনও কিনবো বলে। ছোট্ট বেলায় একটা পুতুল খুব ভালো লেগেছিলো, অনেক দাম ছিল তাই আর কেনা হয়নি। এখনো দোকানটার সামনে গেলে দাঁড়িয়ে দেখি পুতুলটাকে। আমার মেয়েকে কিনে দেবো হয়তো কখনো।
আজকে আইসক্রিমটা কিনবো না, ভাল লাগা মুগ্ধতাটা জিইয়ে রাখব। অন্য হঠাৎ একদিন এমনি সুন্দর বিকেলে আকাশনীল আইসক্রিমটা কিনব, হয়তোবা তখন মেঘ জমবে আকাশে, কে জানে হয়তো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়বে। একটা মেয়ে আকাশনীল আইসক্রিম খেতে খেতে হারিয়ে যাবে ভীড়ের মাঝে।
Monday, 8 June 2015
বৃষ্টিবিলাস৩
ওগো নির্জনে বকুল শাখায়, দোলায় কে আজি দুলিছে ,দোদুল দুলিছে।।
ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল, আঁচল আকাশে হতেছে আকুল।
ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল, আঁচল আকাশে হতেছে আকুল।
বৃষ্টির সাথে আমার জন্মান্তরের সম্পকর্...২২শে শ্রাবণের বষর্াঘন রাতে
জীবনের প্রথম অনুভূতি...আমার জন্মদিনের দিন সবর্দা ঝিমঝিমে বৃষ্টি..
বৃষ্টিহীন জন্মদিন ভাবতেও পারিনা।
আর বষর্া মানেই বকুল ফুল..আমার খুব প্রিয় একটা ফুল.. আমাদের ইসকুলের ছোটো গেটের সামনে একটা বকুল গাছ আছে..তলাটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো...লাল রঙের করমচার মতো ছোট ছোট ফল তার.. যখন ইসকুলে পড়তাম তখন জানতাম না ওটা বকুল গাছ...
বকুল ফুলের সাথে আমার প্রথম পরিচয় রবি ঠাকুরের হাত ধরে... তারপর আম্মুর কাছে শুনি বকুলফুলের মালার কথা...
কলেজ থেকে ফিরছি...ডানকুনি স্টেশনে অপেক্ষা করছি বধর্মানের ট্রেনের জন্য..বষর্াকাল...এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই...একটা গাছের তলায় বসে আছি..টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে ছোট্ট ছোট্ট বকুলফুল...অদ্ভূত সুন্দর পাগল করা গন্ধ.. মনে হচ্ছে অনন্তকাল বসে থাকি...
এতো স্মৃতি, সুন্দর মুহুর্ত আছে বৃষ্টিকে নিয়ে..অথচ বৃষ্টির সাথে আমার আর রামগড়ুরের ছানার কোনো মুহুর্ত নেই...দুয়োরাণী হয়েই রয়ে গেলাম...
কখনো এক বষর্ার সময় ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে দুজনে হাত ধরে...বৄষ্টিস্নাত রাস্তায়... সবুজ বনবীথি.. মাতাল হাওয়ায় উড়ছে শাড়ির আঁচল...
বৃষ্টি... বৃষ্টি... পাগল প্রকৃতি...নরম ঠোঁটের স্পশর্..
বকুল ঝরছে.. ভিজে মাটির নেশাময় সুবাস..
একরাশ বৃষ্টি আমি...অঝোর ধারা..
কানে কানে বলছি...বৃষ্টি বলে ডেকো আমায়...
সুয়োরাণী দুয়োরাণী মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পরশে.. হারানো রুপকথারা একে একে আসছে ফিরে..
বাতাসে শব্দের প্রতিধ্বনি.. বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়....বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...
আর বষর্া মানেই বকুল ফুল..আমার খুব প্রিয় একটা ফুল.. আমাদের ইসকুলের ছোটো গেটের সামনে একটা বকুল গাছ আছে..তলাটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো...লাল রঙের করমচার মতো ছোট ছোট ফল তার.. যখন ইসকুলে পড়তাম তখন জানতাম না ওটা বকুল গাছ...
বকুল ফুলের সাথে আমার প্রথম পরিচয় রবি ঠাকুরের হাত ধরে... তারপর আম্মুর কাছে শুনি বকুলফুলের মালার কথা...
কলেজ থেকে ফিরছি...ডানকুনি স্টেশনে অপেক্ষা করছি বধর্মানের ট্রেনের জন্য..বষর্াকাল...এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই...একটা গাছের তলায় বসে আছি..টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে ছোট্ট ছোট্ট বকুলফুল...অদ্ভূত সুন্দর পাগল করা গন্ধ.. মনে হচ্ছে অনন্তকাল বসে থাকি...
এতো স্মৃতি, সুন্দর মুহুর্ত আছে বৃষ্টিকে নিয়ে..অথচ বৃষ্টির সাথে আমার আর রামগড়ুরের ছানার কোনো মুহুর্ত নেই...দুয়োরাণী হয়েই রয়ে গেলাম...
কখনো এক বষর্ার সময় ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে দুজনে হাত ধরে...বৄষ্টিস্নাত রাস্তায়... সবুজ বনবীথি.. মাতাল হাওয়ায় উড়ছে শাড়ির আঁচল...
বৃষ্টি... বৃষ্টি... পাগল প্রকৃতি...নরম ঠোঁটের স্পশর্..
বকুল ঝরছে.. ভিজে মাটির নেশাময় সুবাস..
একরাশ বৃষ্টি আমি...অঝোর ধারা..
কানে কানে বলছি...বৃষ্টি বলে ডেকো আমায়...
সুয়োরাণী দুয়োরাণী মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পরশে.. হারানো রুপকথারা একে একে আসছে ফিরে..
বাতাসে শব্দের প্রতিধ্বনি.. বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়....বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়...
বৃষ্টিবিলাস২
একদিন এক মেঘবালিকা বললো এসে কৌতূহলে
অ্যায় মেয়েটা নাম কিরে তোর?
ছোট্ট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম মেঘ হবো,উড়ে বেড়াব দেশেবিদেশে! সাদা..সোনালি..গোলাপী মেঘের দল..
এখনো দেখি স্বপ্ন, তবে বৃষ্টি হওয়ার...একরাশ অভিমান হয়ে ঝরে পড়বো রামগড়ুরের ছানার উপর!
গরমের ছুটি মানেই ছিলো ভারি মজা, মামার বাড়ি যাওয়া। সোমসার...রুপকথার রাজ্য..!
দামোদর নদ আর শালি নদীর মিলনস্থান..। গরমকালের সোমসার মানেই সাদা আঁকর ফুলে ভরা বন..পাকা আঁকর ফলের খোসা কালচে লাল আর ভিতরটা লিচুর মতো শাঁসালো সাদা। দারুণ খেতে কিন্তু খেলেই মুখে আঁশটে গন্ধ! কালবৈশাখীর আগমন হলেই নানিজান মেজমামাকে বলতেন আম বাগানে যেতে। মামার সাথে আমরাও হুল্লোড় করে যেতাম সরু আলপথ পেরিয়ে বাগানে। দৌড় ..দৌড়..দৌড়..সব্বার আগে পৌঁছাতে হবে.. ঝড়ে ধুপধাপ করে কাঁচা আম পড়তো..কুড়িয়ে জড়ো করতাম ঝুড়িতে, কে কটা আম কুড়োতে পারে তার কমপিটিশন..!
বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা নেমে আসছে আকাশের বুক চিরে। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছি .. পাগল হাওয়া.. বৃষ্টির আলতো ছোঁয়া.. বৃষ্টিতে দুহাত বাড়িয়ে দেখছি কমলো কিনা..
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে...
সামনে পাগল নদী..উতল হাওয়া..এক ছুট্টে বাড়ি...
আম্মু,নানিজান,নানাভাই মাথা মুছিয়ে দিচ্ছেন..গরম দুধ আর লালস্বণর্ চালের হাতে ভাজা মুড়ি, মুড়িতে ভাজা কুসুম মেশানো.. অসাধারণ টেস্ট।
সামনে বাঁশ বনের মাথায় ঘন কালো মেঘ,বাতাসে সোঁ সোঁ শব্দ.. হনুমান গুলো ভাঙা দালানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টায়... চারিদিকে আতা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। ফলসা গাছে ভিজে একসা কাক। দিঘীর জলে বৃষ্টির আলপনা...রুপকথার রাজ্য মায়াবী রহস্যময়ী!
মানকচু পাতা দিয়ে ছাউনি বানিয়ে আমি,নিউ,কচি,রিমু,শুভ সবাই মিলে সংসার পেতেছি।
বৃষ্টির দমক বাড়ছে..ছাউনি উড়ে যাওয়ার অবস্থায়। সব্বাই মিলে জোরে জোরে বলছি..
লেবু পাতায় করমচা, হে বৃষ্টি থেমে যা!
পলাশ পাতার মুকুট মাথায় শাপলা তুলতে যেতাম বাড়িতে না জানিয়ে, দুধসাদা ফুল, ফুলের মাঝে কোরক যেটা খেতে জাস্ট অসাধারণ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে পুকুর পাড়ে, টুথব্রাশ হাতে নিয়ে.. পেস্টের ফেনায় বাঁশপাতার তৈরি নৌকা সরসর করে এগিয়ে যেত মাঝ পুকুরে..সুন্দরী রুপচাঁদা মাছ ঘুরঘুর করছে ঘাটে...
আজ নানিজান,নানাভাই নেই...আমার রুপকথার রাজ্্যও নেই... কৈশোর হারিয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়!
অ্যায় মেয়েটা নাম কিরে তোর?
ছোট্ট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম মেঘ হবো,উড়ে বেড়াব দেশেবিদেশে! সাদা..সোনালি..গোলাপী মেঘের দল..
এখনো দেখি স্বপ্ন, তবে বৃষ্টি হওয়ার...একরাশ অভিমান হয়ে ঝরে পড়বো রামগড়ুরের ছানার উপর!
গরমের ছুটি মানেই ছিলো ভারি মজা, মামার বাড়ি যাওয়া। সোমসার...রুপকথার রাজ্য..!
দামোদর নদ আর শালি নদীর মিলনস্থান..। গরমকালের সোমসার মানেই সাদা আঁকর ফুলে ভরা বন..পাকা আঁকর ফলের খোসা কালচে লাল আর ভিতরটা লিচুর মতো শাঁসালো সাদা। দারুণ খেতে কিন্তু খেলেই মুখে আঁশটে গন্ধ! কালবৈশাখীর আগমন হলেই নানিজান মেজমামাকে বলতেন আম বাগানে যেতে। মামার সাথে আমরাও হুল্লোড় করে যেতাম সরু আলপথ পেরিয়ে বাগানে। দৌড় ..দৌড়..দৌড়..সব্বার আগে পৌঁছাতে হবে.. ঝড়ে ধুপধাপ করে কাঁচা আম পড়তো..কুড়িয়ে জড়ো করতাম ঝুড়িতে, কে কটা আম কুড়োতে পারে তার কমপিটিশন..!
বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা নেমে আসছে আকাশের বুক চিরে। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছি .. পাগল হাওয়া.. বৃষ্টির আলতো ছোঁয়া.. বৃষ্টিতে দুহাত বাড়িয়ে দেখছি কমলো কিনা..
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে...
সামনে পাগল নদী..উতল হাওয়া..এক ছুট্টে বাড়ি...
আম্মু,নানিজান,নানাভাই মাথা মুছিয়ে দিচ্ছেন..গরম দুধ আর লালস্বণর্ চালের হাতে ভাজা মুড়ি, মুড়িতে ভাজা কুসুম মেশানো.. অসাধারণ টেস্ট।
সামনে বাঁশ বনের মাথায় ঘন কালো মেঘ,বাতাসে সোঁ সোঁ শব্দ.. হনুমান গুলো ভাঙা দালানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টায়... চারিদিকে আতা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। ফলসা গাছে ভিজে একসা কাক। দিঘীর জলে বৃষ্টির আলপনা...রুপকথার রাজ্য মায়াবী রহস্যময়ী!
মানকচু পাতা দিয়ে ছাউনি বানিয়ে আমি,নিউ,কচি,রিমু,শুভ সবাই মিলে সংসার পেতেছি।
বৃষ্টির দমক বাড়ছে..ছাউনি উড়ে যাওয়ার অবস্থায়। সব্বাই মিলে জোরে জোরে বলছি..
লেবু পাতায় করমচা, হে বৃষ্টি থেমে যা!
পলাশ পাতার মুকুট মাথায় শাপলা তুলতে যেতাম বাড়িতে না জানিয়ে, দুধসাদা ফুল, ফুলের মাঝে কোরক যেটা খেতে জাস্ট অসাধারণ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে পুকুর পাড়ে, টুথব্রাশ হাতে নিয়ে.. পেস্টের ফেনায় বাঁশপাতার তৈরি নৌকা সরসর করে এগিয়ে যেত মাঝ পুকুরে..সুন্দরী রুপচাঁদা মাছ ঘুরঘুর করছে ঘাটে...
আজ নানিজান,নানাভাই নেই...আমার রুপকথার রাজ্্যও নেই... কৈশোর হারিয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়!
বৃষ্টিবিলাস১
-- আমি যখন ছোট্ট ছিলাম
খেলতে যেতাম মেঘের দলে...
প্রতিটা মানুষের জীবনে বৃষ্টি একটা আলাদা স্থান পেয়েছে। প্রতিটা বাঙালি মেয়ের মতো বৃষ্টি আমারও সতীন। আমি দুয়োরাণী আর সে সুয়োরাণী। বৃষ্টি ভীষণভাবে প্রিয় রামগড়ুরের ছানার। কোনো এক মূহুতের্ আবেগপ্রবণ হয়ে তার এই স্বীকারোক্তি। ভীষণ হিংসা হয়েছিল। এখনো হয়।
কিন্তু তাকে হিংসা করে কি থাকা যায়? আমার শৈশব, আমার কিশোরীবেলার সঙ্গী । কোনো এক বৃষ্টিবেলায় উতল হাওয়ায় ওড়া চুল আর বৃষ্টির পরশে আমার হটাৎ জেগে ওঠা মেয়েবেলা।
বৃষ্টি মানেই তখন লোডশেডিং। ব্যাটারিতে জ্বলা মায়াভরা হলুদ আলো। আমাদের বাড়িতে তখন জেনারেটর ছিলো না। তখন জানতাম শুধুমাত্র বড়োলোকরাই ব্যবহার করে জেনারেটর। এখনো নেই অবশ্য। সে যাইহোক, ব্যাটারির আলো খুববেশি হলে এক ঘন্টা চলতো। তারপর বই খাতা গুটিয়ে হুল্লোড়,আমরা তিন ভাইবোন। চলতো আন্তাক্ষরী। শ্রোতা আব্বু,আম্মু,দাদি সব্বাই। মাঝেমধ্যে আম্মু গান ধরিয়ে দিতো। না পারলে বিপক্ষ এক পয়েন্ট পাবে। কচি গলায় গেয়ে উঠতাম "শ্যামল শোভন শ্রাবন তুমি নাই বা গেলে।"
কখনো কখনো আব্বুর সাথে রাক্ষস রাক্ষস খেলা। আব্বুর পুরো শরীরটা বালিশ দিয়ে ঢেকে দিতাম। আব্বু চুপ করে শুয়ে থাকতো আর কিছুক্ষণ পর লাফিয়ে উঠে আমাদের ভয় দেখাতো হাউ মাউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পাঁউ। আর হাত বাড়িয়ে আমাদের ধরার চেষ্টা করতো, আমরা দৌড়ে পালিয়ে যেতাম। এতেই কি আনন্দ!
শহরের বৃষ্টি আর গ্রামের বৃষ্টির দিনের মধে্য অনেক পাথর্ক্য। আমাদের বধর্মানের বৃষ্টির দিন মানে দাদাভাইয়ের বাজার করে আনা একরাশ সব্জি দিয়ে বানানো গরম খিচুড়ি, সঙ্গে ডিমভুনা আর বাড়িতে বানানো ঘি। রেনি ডে হলে সেদিন কি মজা। চলতো পুতুল খেলা, আমার মেয়ে পুতুল..জুঁইয়ের ছেলে পুতুলের বিয়ে.. কিন্তু আমার মেয়েকে আমি মোটেই শ্বশুরবাড়ি পাঠাবোনা! আমি ঘর জামাই করে রাখতাম জুঁইয়ের ছেলেকে! বেচারা জুঁই বউমার জন্য শাড়ি গহনা মিষ্টি পাঠিয়ে ক্লান্ত।
নাহলে রেনকোট পড়ে ইসকুল। গায়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে আর জলতরঙ্গের সুর তুলছে।
আব্বুর উটকো শখে আমাকে সবুর স্যারের কাছে বাংলা পড়তে যেতে হয়েছিল কিছুদিন। ভোর ছটায় পড়া। বেচারা জুঁই সাড়ে পাঁচটায় রেডি হয়ে আমাদের বাড়ি চলে আসতো। আমাকে ঘুম থেকে তুলতে! আম্মু,আব্বু আর জুঁইয়ের প্রাণান্ত চেষ্টায় সাড়ে ছটায় স্যারের বাড়ি। স্যার হলেন আমার দেখা একমাত্র অতি ধার্মিক যে কিনা সাহিত্যের লোক।
কামিজ পরা নিয়ে জ্ঞান দিতেন । আমি তখন হাঁটু অবধি অ্যালান ফ্রক নইলে স্কার্ট পরি।
জুঁই তখন সদ্য কৈশোরে পা রাখার অহংকারে সালোয়ার কামিজ পড়ছে। রানি কালারের উপর সাদা ফুটকি পি্রন্ট। কে অতো জ্ঞান শুনবে স্যারের! তার থেকে আমি ঢের বেশি ইন্টারেসটেড, স্যারের বাড়ির সামনে বষর্ায় গজানো কচিসবুজ কলমি বন নিয়ে। হাল্কা বেগুনি কলমি ফুল, মৌমাছি,প্রজাপতি ছেড়ে কে পড়াশোনা করে! জুঁইয়ের পড়া শেষ হলে হোমটাস্ক আর হাতভরে কলমি ফুল নিয়ে সোজা বাড়ি। তারপর গোসল করে খেয়েদেয়ে ঝিমঝিম বৃষ্টিতে রেনকোট পরে ইসকুলের পথে।
আমাদের স্কুলটা অনেক পুরোনো। বড়ো বড়ো খড়খড়ি দেওয়া জানালা। বেশি বৃষ্টির সময় ছাঁট আটকাতে জানালা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হতো। অন্ধকার ক্লাস রুম,একটা গা ছম্ছমে ব্যাপার, তার মধে্য আমাদের জলসা। সুরেলা,রিনি এরা দারুণ গান গাইতো, কখনো আমি আবৃত্তি করতাম। রবি ঠাকুরের সংকলিতা থেকে "বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদেয় এলো বান",কখনোবা সঞ্চয়িতা থেকে "গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা"!
ক্লাস ফাইভ অবধি স্কুলবাসে । তিন নম্বর বাস। আমাদের বাড়িটা এমন জায়গায় ছিলো যে ইসকুল যাওয়ার সময় লাস্ট স্টপ আর ইসকুল থেকে ফেরার সময় ফার্স্ট স্টপ। তারপর হঠাত্ করে একদিন শৈশব পেরিয়ে কৈশোর। বৃষ্টির দিনে ইসকুল থেকে ফেরার পথে সাইকেল ,ভেজা শাড়ি আর ঝাপসা হয়ে আসা চশমা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি আসা। রেনকোট পড়েও কাকভেজা । বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে ফেলে আসা সোনার শৈশব।
খেলতে যেতাম মেঘের দলে...
প্রতিটা মানুষের জীবনে বৃষ্টি একটা আলাদা স্থান পেয়েছে। প্রতিটা বাঙালি মেয়ের মতো বৃষ্টি আমারও সতীন। আমি দুয়োরাণী আর সে সুয়োরাণী। বৃষ্টি ভীষণভাবে প্রিয় রামগড়ুরের ছানার। কোনো এক মূহুতের্ আবেগপ্রবণ হয়ে তার এই স্বীকারোক্তি। ভীষণ হিংসা হয়েছিল। এখনো হয়।
কিন্তু তাকে হিংসা করে কি থাকা যায়? আমার শৈশব, আমার কিশোরীবেলার সঙ্গী । কোনো এক বৃষ্টিবেলায় উতল হাওয়ায় ওড়া চুল আর বৃষ্টির পরশে আমার হটাৎ জেগে ওঠা মেয়েবেলা।
বৃষ্টি মানেই তখন লোডশেডিং। ব্যাটারিতে জ্বলা মায়াভরা হলুদ আলো। আমাদের বাড়িতে তখন জেনারেটর ছিলো না। তখন জানতাম শুধুমাত্র বড়োলোকরাই ব্যবহার করে জেনারেটর। এখনো নেই অবশ্য। সে যাইহোক, ব্যাটারির আলো খুববেশি হলে এক ঘন্টা চলতো। তারপর বই খাতা গুটিয়ে হুল্লোড়,আমরা তিন ভাইবোন। চলতো আন্তাক্ষরী। শ্রোতা আব্বু,আম্মু,দাদি সব্বাই। মাঝেমধ্যে আম্মু গান ধরিয়ে দিতো। না পারলে বিপক্ষ এক পয়েন্ট পাবে। কচি গলায় গেয়ে উঠতাম "শ্যামল শোভন শ্রাবন তুমি নাই বা গেলে।"
কখনো কখনো আব্বুর সাথে রাক্ষস রাক্ষস খেলা। আব্বুর পুরো শরীরটা বালিশ দিয়ে ঢেকে দিতাম। আব্বু চুপ করে শুয়ে থাকতো আর কিছুক্ষণ পর লাফিয়ে উঠে আমাদের ভয় দেখাতো হাউ মাউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পাঁউ। আর হাত বাড়িয়ে আমাদের ধরার চেষ্টা করতো, আমরা দৌড়ে পালিয়ে যেতাম। এতেই কি আনন্দ!
শহরের বৃষ্টি আর গ্রামের বৃষ্টির দিনের মধে্য অনেক পাথর্ক্য। আমাদের বধর্মানের বৃষ্টির দিন মানে দাদাভাইয়ের বাজার করে আনা একরাশ সব্জি দিয়ে বানানো গরম খিচুড়ি, সঙ্গে ডিমভুনা আর বাড়িতে বানানো ঘি। রেনি ডে হলে সেদিন কি মজা। চলতো পুতুল খেলা, আমার মেয়ে পুতুল..জুঁইয়ের ছেলে পুতুলের বিয়ে.. কিন্তু আমার মেয়েকে আমি মোটেই শ্বশুরবাড়ি পাঠাবোনা! আমি ঘর জামাই করে রাখতাম জুঁইয়ের ছেলেকে! বেচারা জুঁই বউমার জন্য শাড়ি গহনা মিষ্টি পাঠিয়ে ক্লান্ত।
নাহলে রেনকোট পড়ে ইসকুল। গায়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে আর জলতরঙ্গের সুর তুলছে।
আব্বুর উটকো শখে আমাকে সবুর স্যারের কাছে বাংলা পড়তে যেতে হয়েছিল কিছুদিন। ভোর ছটায় পড়া। বেচারা জুঁই সাড়ে পাঁচটায় রেডি হয়ে আমাদের বাড়ি চলে আসতো। আমাকে ঘুম থেকে তুলতে! আম্মু,আব্বু আর জুঁইয়ের প্রাণান্ত চেষ্টায় সাড়ে ছটায় স্যারের বাড়ি। স্যার হলেন আমার দেখা একমাত্র অতি ধার্মিক যে কিনা সাহিত্যের লোক।
কামিজ পরা নিয়ে জ্ঞান দিতেন । আমি তখন হাঁটু অবধি অ্যালান ফ্রক নইলে স্কার্ট পরি।
জুঁই তখন সদ্য কৈশোরে পা রাখার অহংকারে সালোয়ার কামিজ পড়ছে। রানি কালারের উপর সাদা ফুটকি পি্রন্ট। কে অতো জ্ঞান শুনবে স্যারের! তার থেকে আমি ঢের বেশি ইন্টারেসটেড, স্যারের বাড়ির সামনে বষর্ায় গজানো কচিসবুজ কলমি বন নিয়ে। হাল্কা বেগুনি কলমি ফুল, মৌমাছি,প্রজাপতি ছেড়ে কে পড়াশোনা করে! জুঁইয়ের পড়া শেষ হলে হোমটাস্ক আর হাতভরে কলমি ফুল নিয়ে সোজা বাড়ি। তারপর গোসল করে খেয়েদেয়ে ঝিমঝিম বৃষ্টিতে রেনকোট পরে ইসকুলের পথে।
আমাদের স্কুলটা অনেক পুরোনো। বড়ো বড়ো খড়খড়ি দেওয়া জানালা। বেশি বৃষ্টির সময় ছাঁট আটকাতে জানালা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হতো। অন্ধকার ক্লাস রুম,একটা গা ছম্ছমে ব্যাপার, তার মধে্য আমাদের জলসা। সুরেলা,রিনি এরা দারুণ গান গাইতো, কখনো আমি আবৃত্তি করতাম। রবি ঠাকুরের সংকলিতা থেকে "বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদেয় এলো বান",কখনোবা সঞ্চয়িতা থেকে "গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা"!
ক্লাস ফাইভ অবধি স্কুলবাসে । তিন নম্বর বাস। আমাদের বাড়িটা এমন জায়গায় ছিলো যে ইসকুল যাওয়ার সময় লাস্ট স্টপ আর ইসকুল থেকে ফেরার সময় ফার্স্ট স্টপ। তারপর হঠাত্ করে একদিন শৈশব পেরিয়ে কৈশোর। বৃষ্টির দিনে ইসকুল থেকে ফেরার পথে সাইকেল ,ভেজা শাড়ি আর ঝাপসা হয়ে আসা চশমা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি আসা। রেনকোট পড়েও কাকভেজা । বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে ফেলে আসা সোনার শৈশব।
ছোট গল্প# 2 ১৫০৫২০১৫
রজনী রোজ সকালে পড়তে যাওয়ার সময় বাড়ির কাছে ক্লাবটার সামনের কদম গাছের তলায় ছেলেটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। বেশ কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছে সে। ছিমছাম শরীরের ছেলেটাকে ভালো ঘরেরই মনে হয়েছে ওর। ছেলেটার গায়ের রং শ্যামলা।মাথায় এলোমেলো অগোছালো চুল। মাঝারি উচ্চতা। অদ্ভূত ভাবে একদৃষ্টে রজনীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
রজনীর ইসকুলে যাওয়ার সময়েও একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটার কি কোনো কাজকর্ম নেই! দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া। অ্যাটলিস্ট দাড়োয়ানের কাজ করতে পারত! একরাশ বিরক্তিতে মন ভরে গেল রজনীর।
কিছুদিন পরের কথা। অনন্ত বাবুর ব্যাচ শেষে সুমন রজনীকে বললো তোর সাথে কিছু কথা আছে।
সুমন রজনীর সাথে একই ব্যাচে পড়ে।
-- তোকে একজনের খুব পছন্দ হয়েছে।
-- মানে? কি ফালতু বকছিস!
-- সতি্য কথা, আমার বন্ধু। তুই তাকে চিনিস, অনেকবার দেখেওছিস।
-- আমি তাকে চিনি? কি ভাবে? অবাক চোখে একরাশ প্রশ্ন রজনীর চোখে। সুমন একটু ঘাবড়ে গেলো।
-- না মানে বলছিলাম আমার একজন বন্ধুর তোকে ভালো লেগেছে, তুই যদি একটু কথা বলতিস! বেশ নার্ভাস হয়েই বললো সুমন!
সুমনের কথা শেষ হতে না হতেই রজনী দেখলো সেই ছেলেটা এগিয়ে আসছে।বেগতিক দেখে সুমন কেটে পড়ে।
ছেলেটা কিছু বলার আগেই রজনী রাগত গলায় বলে উঠল দেখ সামনেই বোর্ডের এগজ্যাম, আমি এখন এই সব নিয়ে একটুও বদার্ড নই!! আমাকে একদম ডিসটার্ব করবে না এইসব ফালতু জিনিসের জন্য।
পরের দিন থেকে আর কোনদিন ছেলেটিকে দেখেনি রজনী।
বোর্ডের রেজাল্টের পর নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে রজনী।
হঠাৎ একদিন ফোন এলো সুমনের।
-- রজনী তুই কি একবার সিটি হসপিটালে আসতে পারবি?
-- বুকটা ছাঁৎ করে উঠল রজনীর!
কেন? কি হয়েছে?
-- আয় না একটু সময় করে! একটু আর্জেন্ট।
বিকেলের দিকে হসপিটালে গিয়েছিল রজনী।
বেডে ধ্রুব শুয়েছিল, শীর্ণকায় ফ্যাকাশে চেহারা। কথা বলতে পারছে না। তবে জ্ঞান আছে এখনো। শেষ ইচ্ছে পূরণের আনন্দে চোখে জল।
বেশ কয়েকটা বছর পেরিয়ে গেছে, রুদ্রর সাথে উত্তাপহীন সম্পকর্ে , রজনী আজ ভালোবাসার খোঁজে!
ধ্রুব থাকলে কি এই শূন্যতা থাকতো!! বুক টা মুচড়ে উঠল রজনীর। ক্যান্সার শুধু একজনকে নয়, অনেকজনের জীবনে বদল আনে।
দীর্ঘশ্বাসের সাথে অশ্রুজল মিলে জীবনটাও নোনতা! ভালোবাসা প্রত্যাখ্যানের কষ্টটা এই প্রথম বুঝতে পারলো রজনী!
সুমন রজনীর সাথে একই ব্যাচে পড়ে।
-- তোকে একজনের খুব পছন্দ হয়েছে।
-- মানে? কি ফালতু বকছিস!
-- সতি্য কথা, আমার বন্ধু। তুই তাকে চিনিস, অনেকবার দেখেওছিস।
-- আমি তাকে চিনি? কি ভাবে? অবাক চোখে একরাশ প্রশ্ন রজনীর চোখে। সুমন একটু ঘাবড়ে গেলো।
-- না মানে বলছিলাম আমার একজন বন্ধুর তোকে ভালো লেগেছে, তুই যদি একটু কথা বলতিস! বেশ নার্ভাস হয়েই বললো সুমন!
সুমনের কথা শেষ হতে না হতেই রজনী দেখলো সেই ছেলেটা এগিয়ে আসছে।বেগতিক দেখে সুমন কেটে পড়ে।
ছেলেটা কিছু বলার আগেই রজনী রাগত গলায় বলে উঠল দেখ সামনেই বোর্ডের এগজ্যাম, আমি এখন এই সব নিয়ে একটুও বদার্ড নই!! আমাকে একদম ডিসটার্ব করবে না এইসব ফালতু জিনিসের জন্য।
পরের দিন থেকে আর কোনদিন ছেলেটিকে দেখেনি রজনী।
বোর্ডের রেজাল্টের পর নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে রজনী।
হঠাৎ একদিন ফোন এলো সুমনের।
-- রজনী তুই কি একবার সিটি হসপিটালে আসতে পারবি?
-- বুকটা ছাঁৎ করে উঠল রজনীর!
কেন? কি হয়েছে?
-- আয় না একটু সময় করে! একটু আর্জেন্ট।
বিকেলের দিকে হসপিটালে গিয়েছিল রজনী।
বেডে ধ্রুব শুয়েছিল, শীর্ণকায় ফ্যাকাশে চেহারা। কথা বলতে পারছে না। তবে জ্ঞান আছে এখনো। শেষ ইচ্ছে পূরণের আনন্দে চোখে জল।
বেশ কয়েকটা বছর পেরিয়ে গেছে, রুদ্রর সাথে উত্তাপহীন সম্পকর্ে , রজনী আজ ভালোবাসার খোঁজে!
ধ্রুব থাকলে কি এই শূন্যতা থাকতো!! বুক টা মুচড়ে উঠল রজনীর। ক্যান্সার শুধু একজনকে নয়, অনেকজনের জীবনে বদল আনে।
দীর্ঘশ্বাসের সাথে অশ্রুজল মিলে জীবনটাও নোনতা! ভালোবাসা প্রত্যাখ্যানের কষ্টটা এই প্রথম বুঝতে পারলো রজনী!
Sunday, 24 May 2015
মেয়েবেলা
জীবনে প্রথম আজকে আমার মনে হল মেয়ে হওয়াটা পাপ। আমি চাইনা আর মেয়ে হয়ে জন্মাতে। আমি চাইনা আমার কন্যাসন্তান জন্মাক। মেয়ে জন্মাক তাদের বাড়িতে যাদের প্রচুর অর্থ আর প্রচুর ক্ষমতা। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়েদের আসলেই কোনো অধিকার নেই! তসলিমা নাসরিনের আজকের লেখাটা পড়ে চোখে জল এলো। এটা তো আমার কথা। আমার মতো হাজার হাজার মেয়ের কথা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা আজকেও তাদের সম্পত্তি হিসাবেই গণ্য হয়। যতই শিক্ষিত আর উপার্জনক্ষম হোক না কেন সেই তাদের নিজের চেনা পরিবেশ ছেড়ে আজকেও অন্যের বাড়ি যেতে হয়। মেয়েদের নিজের বাড়ি বলতে কিছু আছে কি? বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি। নিজের বাড়ি তবে কোনটা? মেয়েদের এই শ্বশুরবাড়িতে থাকার নিয়মটা কবে শেষ হবে! ছেলে মেয়ের বিয়ে হবে তো মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে কেন থাকতে হবে? কেন? সমাজের নিয়ম বলে? এই নিয়মটা বানিয়েছে কে? শ্বশুরবাড়িতে বউদের কোনদিন মেয়ের চোখে দেখা হয়না। মেয়েরা মেয়েদের সব থেকে বড়ো শত্রু। নইলে বাড়ির বউদের মেয়ে ভাবতে এত কষ্ট কেন?
ছেলের বাবা মা ইমপর্ট্যান্ট মানছি। মেয়েদের বাবা মা নয় কেন? সপ্তাহের সারা সময় শ্বশুরবাড়িতে থাকার পর ছুটির দিনে একটা মেয়ে কেন তার মা বাবার কাছে থাকতে পারবে না? কেন তাকে অনুমতি নিতে হবে তার নিজের বাবা মার কাছে যাওয়ার জন্য?
আজকে আমার মতো শিক্ষিত চাকুরিজীবি মেয়েকে যদি শুনতে হয় বিয়ের পর সপ্তাহ শেষে তুমি তোমার বাড়ি যেতে পারবে না, আমার বাড়ির লোকের সাথে তোমাকে সময় কাটাতে হবে, আমার পছন্দের পোষাক পরতে হবে, আমার কথা শুনতে হবে নইলে এই সম্পকর্ ভুলতে হবে।
তাহলে আমি সেই মেয়েদের কথা ভেবে শিউড়ে উঠি যাদের কোনো উপায় নেই এসব কথা না মেনে। পুরুষ তোমার লজ্জা হয় না সমাজের দোহাই দিয়ে মেয়েদের অসহায়তার সুযোগ নিতে?
Subscribe to:
Posts (Atom)