Thursday, 2 May 2019

পিউয়ের পোষ্যরা ১

হঠাৎ এক চৈত্রমাসের কোনো এক সপ্তাহে দাদাভাই আমাদের দুইবোনকে দুটো টিয়াপাখির ছানা কিনে দিলেন। এই এত্তোটুকুন... তুলোর মতো সাদা সাদা নরম লোম সারা গায়ে... মাঝেসাঝে সবুজ পালক। তখনো পালক গজায়নি পুরোপুরি, গোলাপী চামড়া দৃশ্যমান... চোখ ফুটেছে মাত্র,লাল টুকটুকে ঠোঁট ! পাখিওলা রাস্তা দিয়ে পাখি নিয়ে যাচ্ছিলো... তা দেখে আমার বায়না পাখি কিনবো।
মায়ের কোল থেকে পাখিওলা তুলে এনেছে দুটো পয়সার লোভে। আহা রে জীবন... দুটো পয়সার জন্য কত কি করতে হয় মানুষকে।
বাচ্চা দুটো খেতে পারে না নিজে নিজে... পাখিওলা বললো মুসুর ডাল ভিজিয়ে খাওয়াবেন। আমরা তাই করলাম। সেই সময় টুটুদিদিরা এসেছে আমাদের বাড়ি। তাই অনেক লোকজন পুরো বাড়িতে। আত্মীয় স্বজনরা সব দেখা করতে এসেছে। টুটুদিদি আমার বড়োফুফুমণির মেয়ে। জিজু চাকরি করেন এয়ারফোর্সে। এই শক্তপোক্ত চেহারা,শক্তিমান.....বিকানিরে থাকেন। সেই জিজু আমাদের সবার খুব প্রিয়। তিনি বললেন বাচ্চাদুটোর নাম রাখতে হবে তো? কিছু নাম ঠিক করলে তোমরা? আমরা দুই বোন বললাম আপনিই ঠিক করুন। উনি নাম রাখলেন মিকি মাউস আর নিকি ন্যাপচুন। আমাদেরও খুব পছন্দ হলো নাম দুটো।
কিছুদিন পরে নিকি ন্যাপচুনের হঠাৎ করেই শরীর খারাপ, খাবার হজম করতে পারছে না। মুসুর ডাল হজম করার ক্ষমতা নেই অতোটুকু বাচ্চাদের। মিকিও অসুস্থ...পয়লা বৈশাখের দিন বাড়িতে বিশাল হৈ চৈ.. বাবুর্চি রান্না করছে । এমন সময় নিকি ন্যাপচুন মরে গেলো। আমার সে কি বুক ফাটা কান্না। খুব কেঁদেছিলাম... আমার বুকের ভিতরটা যেন ছিঁড়ে নিয়েছিলো কেউ.. আম্মু দাদাভাই সবাই সান্ত্বনা দিচ্ছে!
আত্মীয় স্বজনরা বুঝতে পারছে না একটা সামান্য পাখির জন্য কেন এতো কান্নাকাটি... এদিকে মিকিও অসুস্থ... মুসুর ডাল হজমের ক্ষমতা তার নেই।
শেষে ড্রপে করে তাকে দুধ খাওয়াতে শুরু করলাম। কদিন পরে আমার মিকি সুস্থ হলো। তার পালক গজানো শুরু হলো... মিকি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। মা ভাবে কিনা জানিনা... কিন্তু সে আমার ঘাড়ে, মাথায় চড়ে ঘুরে বেড়ায়। খাঁচায় থাকার কোনো শখ তার নেই।
এদিকে বাড়িতে অনেক বেড়াল। সামনে ইয়াদের বাড়িতে অনেক বিড়াল আছে। তারা আমাদের বাড়ি এসে বসে থাকে। ডাস্টবিন উল্টিয়ে মাছের কাঁটা খায়।
অগত্যা মিকিকে খাঁচায় রাখতে হবেই... মিকি থাকবে কেন?
সে ঠোঁটে করে খাঁচার শিক বেঁকিয়ে বেরিয়ে যায়! কিছুতে তাকে বাগে আনা যায়না। আম্মু দাদি দুজনেই বলে যেমন মনিব, তেমন তার পাখি! দুটোই গেছো এবং বদমাশ!
এমন করে বেড়োতে গিয়ে হঠাৎ একদিন মিকির একটা পাখায় আঘাত লেগে হাড় সরে গেলো। সে চেষ্টা করলেও আর সারেনি। মিকি আর ভালো উড়তে শিখতে পারলো না । অল্প বিস্তর কাজ চালানোর মতো উড়তে পারে।
সেই মিকি প্রথম কথা শিখলো "এ পিউ"
আমাকে মনে পরলে কিংবা দেখতে পেলেই সুর করে ডাকে "এ পিউ... মিক মিক মিকি।" মানে এ পিউ, মিকি তোকে ডাকছে।
কখনো শিষ দিয়ে বলে "এ পিউ... মিক মিক মিকি।"
কোনো অপরিচিত এলে চীৎকার "কে কে কে?"
কোনো অপরিচিত মানুষ বাড়িতে এসে বাড়ির কোনো কিছুতে হাত দিলে চীৎকার করে পাড়া মাত করে।
আমি যখন হারমোনিয়ামে রেওয়াজ করি আমার সঙ্গে সুর করে
গায় "আয় তবে সহচরী।"
আম্মু আমাকে মারলে বা বকলে মিকি জোরে জোরে আম্মুকে বকে দেয়। আমার ক্ষেত্রে মিকি সাংঘাতিক রক্ষণশীল। সে কাউকে বকতে দেবে না, মারতে দেবে না। আমার উপর একমাত্র তার অধিকার।
আমাকে সে কামড়ায়না, আঁচড়ায়না। বাকিদের কামড়ে আঁচড়ে রক্ত বের করে দেয়! দাদি খেতে দিতে গিয়ে কামড় খেয়ে বলতেন "বদ পাখি কোথাকার, আর খেতে দেবো না! "
মিকি চোখ পাকিয়ে আবার ঠুকরে দেয়। মিকি আমার সর্বস্ব, সে আমার জান।
আব্বু মজা করে মিকিকে নাতি ডাকে... আর বলে শ্বশুড়বাড়ি গেলে মিকিকে আমার সঙ্গে দেবে!
(চলবে)

No comments:

Post a Comment