ফুলটুসীকে তো বগলে করে বর্ধমানের বাড়িতে নিয়ে এলাম। ফুলটুসী বেজায় অবাক। এ আবার কোথায় এলাম রে বাবা! গাছ নেই, ঘাস নেই, মাটি নেই, আকাশ আছে বটে তা সেই ছাদে উঠলেই শুধু দেখা যায়... আজব পৃথিবী।
প্রথম কদিন ফুলটুসীকে বেঁধে রাখা হলো... দুদিন পরে ফুলটুসী দিব্যি ঘর চিনে গেলো। অনিতা সিনেমা লেন থেকে ফুলটুসীর জন্য ফল রাখার কাঠের বাস্কেট আনা হলো। আজ থেকে ফুলটুসীর দরমা ঐটায়। ফুলটুসী মন খারাপ হয়েছিলো কিনা জানিনা... মুরগীরা বোধহয় কাঁদে না, মন খারাপ করেনা... কিংবা করে কে জানে! ফুলটুসী কিন্তু দিব্যি মানিয়ে নিলো বর্ধমানে। যখন মন হতো টুকটুক করে ছাদে চলে যেতো। সকাল বেলা কুঁক কুঁক করতে করতে একতলা থেকে দোতলায় চলে আসতো দিব্যি... দাদি আর আম্মু রান্নার জন্য সব্জি কাটছে, মাছ কুটছে... ফুলটুসী মনের আনন্দে ফেলে দেওয়া কানকো, লাউয়ের খোসা খাচ্ছে।
লোকে বলে ছাগলে কিনা খায়... আমি বলি মুরগীতে কিনা খায়... মুরগীকে মুরগীর মাংস দিলেও খেয়ে নেবে সোনা মুখ করে।
সেই ফুলটুসীকে হঠাৎ একদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না...হঠাৎ করেই। আমি তো হাত পা ছড়িয়ে চীৎকার করে কাঁদছি...
নীচে থেকে দাদা দৌড়ে চলে এসেছেন "কি হলো বড়কির ? কাঁদছে কেন? কে মেরেছে? আয় আয় আমার কাছে আয়... কারোর কাছে যেতে হবেনা। আমি তোমাকে অনেক মুরগী কিনে দেবো বুবু... কাঁদে না।"
তারপর আম্মু আর দাদির দিকে রেগে বললেন.. "তখন থেকে মেয়েটা কাঁদছে! দ্যাখো না মুরগীটা গেলো কোথায়!"
আমার দাদা ছিলেন খুব রাগী... সবাই খুব ভয় পায় , যাকে বলে থরহরিকম্প। এমনকি বিকেলে দাদার কাছে ফলের খোসা খেতে আসা ছাগলেরাও দাদাকে ভয় পায়। একবার দাদার শরীর খুব খারাপ... খারাপ মানে যাকে বলে যাচ্ছেতাই খারাপ। পাড়ার
লোকজন সবাই জড়ো হয়ে গেছে... পার্টি অফিস থেকে লোকজন দৌড়ে চলে এসেছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, ডাক্তার সে এক হৈ চৈ ব্যাপার। আমার ছোটো ফুফাজান কোথা থেকে একখান কোরআন শরীফ এনে দাদার মাথার কাছে পড়তে শুরু করে দিলেন। সবাই গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে... এখুনি মরে যাবে দাদা।
আমার খুব মনখারাপ... দাদা সত্যিই মরে যাবে?
এমন সময় দাদা হুঙ্কার দিয়ে উঠলো... "দূর হয়ে যাও সব এখান থেকে! ইয়ার্কি হচ্ছে অ্যাঁ? আমি এখনি মরছিনা । ওসব কোরাণ শরীফ নিয়ে দূর হয়ে যাও আমার দুচোখের সামনে থেকে!"
সেই চীৎকার শুনে কোরাণ শরীফ নিয়ে ফুফাজান প্রায় খাট থেকে পড়ে যায় যায় অবস্থা! একরকম দৌড়ে পালিয়ে বাঁচেন! এদিকে ঘরও প্রায় ফাঁকা হয়ে গেলো সেই হুঙ্কারে!
একমাত্র প্রাণী যে দাদাকে ভয় পায়না সে হলো আমি! দাদার মুখে তর্ক, দাদাকে বকা প্রায় সবই আমি করি। দাদাকে প্রশ্ন করে তিতিবিরক্ত করে দিই...বিরক্ত হয়ে দাদা বলেন "জজব্যারিস্টার হবে বড়ো হয়ে, উফ! জানটা খারাপ করে দিলে বকে বকে!!! দূর হয়ে যাও চোখের সামনে থেকে"
আমার সেই রাগী দাদাই এখন আমাকে কোলে করে ভোলাচ্ছেন!
নানাভাই এসেছেন সেইসময়। আমার নানাভাই শিল্পী মানুষ... অসাধারণ ছবি আঁকেন। শান্ত শিষ্ট ধবধবে ফরসা কমকথা বলা একটা লোক... হাঁপানির রুগী ।
তিনিও শশব্যস্ত হয়ে মুরগী খুঁজছেন। বাড়ির সবাই মুরগী খুঁজতে ব্যস্ত। প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেছে... আম্মু প্রায় নিশ্চিত কুকুর কিংবা বিড়ালে ফুলটুসীকে মেরে ফেলেছে! এমন সময় কি মনে হতে ছাদের সিঁড়ি ওঠার চাতালে পড়ে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের গামলাটা তুলতেই দেখে ..অজ্ঞান ফুলটুসী!
ছাদে যেতে গিয়ে ডানার ঝাপটে কোনোভাবে সে গামলা চাপা পড়ে গেছে... তারপর আর বেরোতে পারেনি! আধঘন্টা চাপা থেকে অক্সিজেনের অভাবে তার এই দশা!
আমি তো ফুলটুসীর ঐ অবস্থা থেকে আরো কান্নাকাটি জুড়েছি। আম্মু তখন ফুলটুসীকে নিয়ে এসে দাদির ঘরে ফ্যানের তলায় রেখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে, পানি খাওয়াচ্ছে। প্রায় মিনিট পনেরো পরে টলতে টলতে ফুলটুসী উঠে দাঁড়ালো... আমি জড়িয়ে ধরলাম আমার ফুলটুসীকে।
তারপর থেকে ফুলটুসীর যাতায়াতের রাস্তায় বালতি, গামলা কিছুই রাখা হতো না। সে নিশ্চিন্তে একতলা থেকে ইচ্ছামতো ছাদে যেতো।
লোকে বলে ছাগলে কিনা খায়... আমি বলি মুরগীতে কিনা খায়... মুরগীকে মুরগীর মাংস দিলেও খেয়ে নেবে সোনা মুখ করে।
সেই ফুলটুসীকে হঠাৎ একদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না...হঠাৎ করেই। আমি তো হাত পা ছড়িয়ে চীৎকার করে কাঁদছি...
নীচে থেকে দাদা দৌড়ে চলে এসেছেন "কি হলো বড়কির ? কাঁদছে কেন? কে মেরেছে? আয় আয় আমার কাছে আয়... কারোর কাছে যেতে হবেনা। আমি তোমাকে অনেক মুরগী কিনে দেবো বুবু... কাঁদে না।"
তারপর আম্মু আর দাদির দিকে রেগে বললেন.. "তখন থেকে মেয়েটা কাঁদছে! দ্যাখো না মুরগীটা গেলো কোথায়!"
আমার দাদা ছিলেন খুব রাগী... সবাই খুব ভয় পায় , যাকে বলে থরহরিকম্প। এমনকি বিকেলে দাদার কাছে ফলের খোসা খেতে আসা ছাগলেরাও দাদাকে ভয় পায়। একবার দাদার শরীর খুব খারাপ... খারাপ মানে যাকে বলে যাচ্ছেতাই খারাপ। পাড়ার
লোকজন সবাই জড়ো হয়ে গেছে... পার্টি অফিস থেকে লোকজন দৌড়ে চলে এসেছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, ডাক্তার সে এক হৈ চৈ ব্যাপার। আমার ছোটো ফুফাজান কোথা থেকে একখান কোরআন শরীফ এনে দাদার মাথার কাছে পড়তে শুরু করে দিলেন। সবাই গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে... এখুনি মরে যাবে দাদা।
আমার খুব মনখারাপ... দাদা সত্যিই মরে যাবে?
এমন সময় দাদা হুঙ্কার দিয়ে উঠলো... "দূর হয়ে যাও সব এখান থেকে! ইয়ার্কি হচ্ছে অ্যাঁ? আমি এখনি মরছিনা । ওসব কোরাণ শরীফ নিয়ে দূর হয়ে যাও আমার দুচোখের সামনে থেকে!"
সেই চীৎকার শুনে কোরাণ শরীফ নিয়ে ফুফাজান প্রায় খাট থেকে পড়ে যায় যায় অবস্থা! একরকম দৌড়ে পালিয়ে বাঁচেন! এদিকে ঘরও প্রায় ফাঁকা হয়ে গেলো সেই হুঙ্কারে!
একমাত্র প্রাণী যে দাদাকে ভয় পায়না সে হলো আমি! দাদার মুখে তর্ক, দাদাকে বকা প্রায় সবই আমি করি। দাদাকে প্রশ্ন করে তিতিবিরক্ত করে দিই...বিরক্ত হয়ে দাদা বলেন "জজব্যারিস্টার হবে বড়ো হয়ে, উফ! জানটা খারাপ করে দিলে বকে বকে!!! দূর হয়ে যাও চোখের সামনে থেকে"
আমার সেই রাগী দাদাই এখন আমাকে কোলে করে ভোলাচ্ছেন!
নানাভাই এসেছেন সেইসময়। আমার নানাভাই শিল্পী মানুষ... অসাধারণ ছবি আঁকেন। শান্ত শিষ্ট ধবধবে ফরসা কমকথা বলা একটা লোক... হাঁপানির রুগী ।
তিনিও শশব্যস্ত হয়ে মুরগী খুঁজছেন। বাড়ির সবাই মুরগী খুঁজতে ব্যস্ত। প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেছে... আম্মু প্রায় নিশ্চিত কুকুর কিংবা বিড়ালে ফুলটুসীকে মেরে ফেলেছে! এমন সময় কি মনে হতে ছাদের সিঁড়ি ওঠার চাতালে পড়ে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের গামলাটা তুলতেই দেখে ..অজ্ঞান ফুলটুসী!
ছাদে যেতে গিয়ে ডানার ঝাপটে কোনোভাবে সে গামলা চাপা পড়ে গেছে... তারপর আর বেরোতে পারেনি! আধঘন্টা চাপা থেকে অক্সিজেনের অভাবে তার এই দশা!
আমি তো ফুলটুসীর ঐ অবস্থা থেকে আরো কান্নাকাটি জুড়েছি। আম্মু তখন ফুলটুসীকে নিয়ে এসে দাদির ঘরে ফ্যানের তলায় রেখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে, পানি খাওয়াচ্ছে। প্রায় মিনিট পনেরো পরে টলতে টলতে ফুলটুসী উঠে দাঁড়ালো... আমি জড়িয়ে ধরলাম আমার ফুলটুসীকে।
তারপর থেকে ফুলটুসীর যাতায়াতের রাস্তায় বালতি, গামলা কিছুই রাখা হতো না। সে নিশ্চিন্তে একতলা থেকে ইচ্ছামতো ছাদে যেতো।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment