Thursday, 2 May 2019

গজালে

আমার খালামণির বাড়ি নলডাঙা। সেখানে হরেকরকম মজার লোক আছে। প্রায় প্রতি গ্রামেই এইরকম মজার লোক থাকে। এরকমই একজন হলো গজাল। গজালের নাম গজাল কেন জানিনা। ভাইয়ের নাম সম্ভবত পেরেক। 
যাগগে, গজালকে ছেলেবুড়ো সবাই আদর করে গজালে বলে। গজালের বোধবুদ্ধি বেশ কম... শিশুদের ন্যায় বলা যায়। তা সেই গজালেকে একবার দায়িত্ব দেওয়া হলো বর্ধমানে গরু নিয়ে যাওয়ার। বাঁকুড়া মোড়ের কাছে সে আমাদের মুনিশকে গরু দিয়ে আম্মুর ছাগলকে গজালের হাতে ট্রান্সফার করবে। 
আমাদের গ্রামে ছাগলের যত্ন আত্তি হচ্ছে না বলে ছাগলকে খালামণির বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ছাগলের বাচ্চা কাচ্চাও হচ্ছে না। আম্মু খুবই চিন্তিত। আম্মু সেই কবে কোন যুগে নব্বই টাকা দিয়ে একটা ছাগীছানা কিনেছিলো... তার ছানাপোনা বেড়ে বেশ অনেকগুলো হয়েছে। আম্মু গ্রামের গরীব লোকজনকে এই ছাগলের ছানাদের ভাগে দেয়। খাসী হলে কালিপুজো কিংবা বকরিদের সময় বিক্রি করে দেওয়া হয়।
মাঝেমধ্যে আম্মু গ্রামে গেলে লোকজন ছাগলদের দেখাতে নিয়ে আসে আম্মুর কাছে।
যাগগে, গজালে গরু আনছে... আর এদিক হতে আমাদের মুনিশকাকু ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। যথাসময়ে দুজনের দেখা হলো...
এবার অদলবদলের পালা। হঠাৎ করে গজালে বেঁকে বসলো। সে কিছুতেই গরুর বদলে ছাগল দেবে না।
সে বলছে "আমাকে বোকা পেইচো অ্যাঁ? গরুর বদলে ছাগল আমি দিবোনা কিচুতেই। গরুর দাম বেশি, ছাগলের দাম কম।"
অনেক কষ্টে শেষে তাকে বোঝানো গেলো গরু ছাগলের মালিক একজনই... এখানে গরুর বদলে ছাগল বিক্রি করা হচ্ছে না।
তা সেই গজালের বিয়ে। গজাল খুবই খুশী।
সারাদিন অনুষ্ঠান হওয়ার পরে গজালে নতুন বউয়ের জন্য একটা আপেল আর ছুরি নিয়ে বাসরঘরে ঢুকলো।
বাসরঘরে ঢুকে সে বউকে সারপ্রাইজ দেবে আপেল দিয়ে। তাই সে কি করলো ছুরিটা একহাতে নিয়ে আপেলটা অন্যহাতে পিছনে নিয়ে (যাতে বউ দেখতে না পায়) দরজার ছিটকিনি তুলছে। এদিকে বউ দেখছে হাতে ছুরি নিয়ে গজালে দরজায় খিল দিচ্ছে। বউ ভাবছে গজালে তাকে খুন করতে আসছে। বউ যত চেঁচাচ্ছে... গজালেও চেঁচাচ্ছে ছুরি না আপেল আপেল করে।
বউ জানের ডাহায় ওসব শুনবে কেন? শেষে বউ কোনোক্রমে দরজা খুলে পালিয়ে যায়। এই বউ আর ফিরে আসেনি।

No comments:

Post a Comment