প্রথম যখন জিন্স পরি ক্লাস এইটে কি সেভেনে পড়ি। বোন অবশ্য বরাবরই ফ্যান্সি। তিনি তার আগেই জিন্স পরতেন। তা তখন ব্যাপারটা অন্য রকম ছিলো। ক্লাস সিক্স মানে এবার ফ্রক বন্ধ করে চুড়িদারে যাওয়াটাই নিয়ম ছিলো। আমরা দু বোন যথারীতি ক্লাস সিক্সেও বড়ো হয়ে উঠতে পারলাম না। মানে রোগা পাতলা প্যাঁকাটি শরীরে সেই পুঁচকেই লাগি! আম্মুও ফ্রক কেনা বন্ধ করলো না। ওদিকে তখন টিউশনে পাড়ার বন্ধুরা চুড়িদার পড়ছে। তখন মার্কেটে কুচকুচ হোতা হ্যায় হেবি হিট। কাজলের সেই লাল চুনরি সাদা চুড়িদারে মহিলা মহল বিশেষ করে আমাদের মতোন উঠতি ছানাপোনারা বিশালভাবে আকৃষ্ট।
সবাই সাদা চুড়িদারের সাথে লাল ওড়না নিয়ে নিজেদের কাজল ভাবছে। আমিও ভাবার চেষ্টা করলাম.. বাদ সাধলো মাইনাস সিক্সের পেল্লাই চশমা। কালো ফ্রেমের গোলগোল চশমা লোকজনের কাছে হাস্যকর একটা বিষয় ছিলো। পাড়ার ছেলেপুলেরা যখন বাকি কিছুতে পেরে উঠতো না তখন চারচোখো, চশমিস ইত্যাদি বলে খেপাতো। আমিও কেমন জানি তখন এই চশমা পরাটাকে বাজে ভাবে দেখতাম... সবাই কি সুন্দর কাজল, আইলাইনার পরে আর আমার সব ঢেকে যায় ছাই চশমাতেই। বিচ্ছিরি... একেবারে বিচ্ছিরি।
অথচ আমি ছোটো থেকে কি সুন্দর সোজা ভাবে আইলাইনার পরতে পারতাম.. একটুও হাত কাঁপতো না। জুঁই, নিউ সবাই আমার কাছেই আইলাইনার পরতো... আর সেই আমিই কিনা আইলাইনার পরে কাউকে দেখাতে পারছিনা, সব চশমাতে ঢাকা পরে যাচ্ছে!
সবুর স্যারের কাছে বাংলা আর ইংরাজী পড়তে যেতাম। তিনি আবার ধার্মিক মানুষ। সকাল সন্ধে আমাকে চুড়িদার পরার উপদেশ দিতেন.. আর অ্যালান ফ্রক পরা আমি বিরক্ত হয়ে স্যারের ঘরের উঠোনের কলমীশাকে বেশী মনোযোগ দিতাম। স্যার ওদিকে ঘরে পড়াচ্ছেন... এদিকে আমি উঠোনে বর্ষার সজীব লকলকে কলমী শাক, তার গোলাপী ফুল আর মৌমাছি নিয়ে ব্যস্ত।
পড়াশুনো করে কে আর সময় নষ্ট করে!!! যতটুকু দরকার তার বেশী পড়াশোনা করা আমার ধাতে নেই। তাহলে কুকুরছানা, বেড়ালছানা, শালিখ পাখি, পায়রাদের সময় কে দেবে?
যাগগে, যখন জিন্স পরতে শুরু করি ত্রিভুবনে আত্মীয়দের মধ্যে কেউ জিন্স পরেনা। আব্বু মেয়েকে জিন্স পরতে দেখে এক সপ্তাহ কথা বন্ধ করে দিলো... তারপরের সপ্তাহে অবশ্য তাস খেলতে বসে গেছে মেয়েদের সাথে! তখন দশটায় পড়াশোনা শেষ করে আমরা তিনভাইবোন আর আব্বু একঘন্টা তাস খেলতাম। আম্মু চীৎকার করতো “এমন বাপ যে ছেলেদের পড়তে বসতে না বলে তাস খেলতে বলছে”... তারপর একসময় বিরক্ত হয়ে বলতো “ভাত দিচ্ছি.. খেয়ে দেয়ে আমাকে উদ্ধার করো!”
যাগগে, জিন্স পরিহিত মেয়েদের দেখে আনাচে কানাচে ঘুষঘুষে কথা.... ‘কাজী সাহেব বেঁচে নেই তাই মেয়েগুলো এসব অসভ্য জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বেঁচে থাকলে ঠান্ডা করে দিতেন এতো সাহস ইত্যাদি প্রভৃ নানারকম বক্তব্য।’
কাজীসাহেব হলেন আমার দাদা... লোকের ধারণা ছিলো উনি বেঁচে থাকলে আমার এতো সাহস হতো না। আমার অবশ্য উল্টো ধারণা... ওনার কারণেই আমি এতো সাহসী। আমিই বোধহয় প্রথম যে ওনার চোখে চোখ রেখে তর্ক করতাম… উনি শেষে যুক্তিতে না পেরে বিরক্ত হয়ে বলতেন বড়ো হয়ে জজ হবি! কিন্তু উনি কখনোই আমাকে বারণ করেননি তর্ক না করতে… কিংবা বলা যায় অতিরিক্ত স্নেহের কারণে আমাকে বাগে আনতে পারেননি। দাদার স্বভাব ছিলো কাউকে ভয় না পাওয়া… আমারও খানিকটা হলেও ঐ স্বভাব আছে।
ওনার ধারণা ছিলো জামাতী-তবলিগের লোকেরা অধিকাংশই ধান্দাবাজ হয়… বেশী ধর্মকর্ম করা লোক উনি পছন্দ করতেন না। একবার আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের পীর হওয়ার গল্প শুনে বলেছিলেন “ও কবে আবার পীর হলো? ওতো কংগ্রেসী গুন্ডা! যত্তসব!”
সবাই সাদা চুড়িদারের সাথে লাল ওড়না নিয়ে নিজেদের কাজল ভাবছে। আমিও ভাবার চেষ্টা করলাম.. বাদ সাধলো মাইনাস সিক্সের পেল্লাই চশমা। কালো ফ্রেমের গোলগোল চশমা লোকজনের কাছে হাস্যকর একটা বিষয় ছিলো। পাড়ার ছেলেপুলেরা যখন বাকি কিছুতে পেরে উঠতো না তখন চারচোখো, চশমিস ইত্যাদি বলে খেপাতো। আমিও কেমন জানি তখন এই চশমা পরাটাকে বাজে ভাবে দেখতাম... সবাই কি সুন্দর কাজল, আইলাইনার পরে আর আমার সব ঢেকে যায় ছাই চশমাতেই। বিচ্ছিরি... একেবারে বিচ্ছিরি।
অথচ আমি ছোটো থেকে কি সুন্দর সোজা ভাবে আইলাইনার পরতে পারতাম.. একটুও হাত কাঁপতো না। জুঁই, নিউ সবাই আমার কাছেই আইলাইনার পরতো... আর সেই আমিই কিনা আইলাইনার পরে কাউকে দেখাতে পারছিনা, সব চশমাতে ঢাকা পরে যাচ্ছে!
সবুর স্যারের কাছে বাংলা আর ইংরাজী পড়তে যেতাম। তিনি আবার ধার্মিক মানুষ। সকাল সন্ধে আমাকে চুড়িদার পরার উপদেশ দিতেন.. আর অ্যালান ফ্রক পরা আমি বিরক্ত হয়ে স্যারের ঘরের উঠোনের কলমীশাকে বেশী মনোযোগ দিতাম। স্যার ওদিকে ঘরে পড়াচ্ছেন... এদিকে আমি উঠোনে বর্ষার সজীব লকলকে কলমী শাক, তার গোলাপী ফুল আর মৌমাছি নিয়ে ব্যস্ত।
পড়াশুনো করে কে আর সময় নষ্ট করে!!! যতটুকু দরকার তার বেশী পড়াশোনা করা আমার ধাতে নেই। তাহলে কুকুরছানা, বেড়ালছানা, শালিখ পাখি, পায়রাদের সময় কে দেবে?
যাগগে, যখন জিন্স পরতে শুরু করি ত্রিভুবনে আত্মীয়দের মধ্যে কেউ জিন্স পরেনা। আব্বু মেয়েকে জিন্স পরতে দেখে এক সপ্তাহ কথা বন্ধ করে দিলো... তারপরের সপ্তাহে অবশ্য তাস খেলতে বসে গেছে মেয়েদের সাথে! তখন দশটায় পড়াশোনা শেষ করে আমরা তিনভাইবোন আর আব্বু একঘন্টা তাস খেলতাম। আম্মু চীৎকার করতো “এমন বাপ যে ছেলেদের পড়তে বসতে না বলে তাস খেলতে বলছে”... তারপর একসময় বিরক্ত হয়ে বলতো “ভাত দিচ্ছি.. খেয়ে দেয়ে আমাকে উদ্ধার করো!”
যাগগে, জিন্স পরিহিত মেয়েদের দেখে আনাচে কানাচে ঘুষঘুষে কথা.... ‘কাজী সাহেব বেঁচে নেই তাই মেয়েগুলো এসব অসভ্য জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বেঁচে থাকলে ঠান্ডা করে দিতেন এতো সাহস ইত্যাদি প্রভৃ নানারকম বক্তব্য।’
কাজীসাহেব হলেন আমার দাদা... লোকের ধারণা ছিলো উনি বেঁচে থাকলে আমার এতো সাহস হতো না। আমার অবশ্য উল্টো ধারণা... ওনার কারণেই আমি এতো সাহসী। আমিই বোধহয় প্রথম যে ওনার চোখে চোখ রেখে তর্ক করতাম… উনি শেষে যুক্তিতে না পেরে বিরক্ত হয়ে বলতেন বড়ো হয়ে জজ হবি! কিন্তু উনি কখনোই আমাকে বারণ করেননি তর্ক না করতে… কিংবা বলা যায় অতিরিক্ত স্নেহের কারণে আমাকে বাগে আনতে পারেননি। দাদার স্বভাব ছিলো কাউকে ভয় না পাওয়া… আমারও খানিকটা হলেও ঐ স্বভাব আছে।
ওনার ধারণা ছিলো জামাতী-তবলিগের লোকেরা অধিকাংশই ধান্দাবাজ হয়… বেশী ধর্মকর্ম করা লোক উনি পছন্দ করতেন না। একবার আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের পীর হওয়ার গল্প শুনে বলেছিলেন “ও কবে আবার পীর হলো? ওতো কংগ্রেসী গুন্ডা! যত্তসব!”
যাগগে, যা বলছিলাম.. তো মোটামুটি এবার আব্বু আম্মুকে শুনতে হচ্ছে মেয়েকে মানুষ করতে পারোনি। মেয়ে মানে আমি আরকি… যাকে ফরমাশ করলে মুখের উপর বলে নিজে নিয়ে পানি খাও। মুখের সামনে পানি ধরার মতো সময় নেই।
যে সারাদিন বই পড়ে আর কিছু হলেই লেকচার দেয়। অতএব এই রকম একটা ধারণা হলো এতো বেশি বই পড়ার কারণেই অসভ্য মেয়ে হয়েছি।
একবার আমার এক ফুফুমণির বাড়িতে এক বিয়েতে গেছি। বিয়ে শেষে ফিরবো গাড়িতে… তা ফুফুমণির বাড়ি সে চব্বিশ পরগণার দূর এক গ্রামে… বর্ধমান থেকে অনেক দূর, তাই আবার জুনমাসের প্যাচপেচে গরম। অতএব আমরা দুবোনেই জিন্স পরেছি। ফুফুমণির এক আত্মীয় ছিলেন সাংঘাতিক রিগ্রেসিভ… মেয়েদের কি করা উচিত কি করা উচিত নয় তার উপর লেকচার দিচ্ছেলেন। আমিও খুব তর্ক করছি।
শেষে উনি বললেন মেয়ে শিক্ষিত হয়েছে বটে, কিন্তু মানুষ হয় নাই।
ফুফুমণিও বললেন যে আমার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সামনে নাক কেটে দিলি… এখানে জিন্স পরার কি দরকার ছিলো ইত্যাদি প্রভৃতি।
যতই বোঝানো হোক যে জিন্স তো সারাক্ষণ পরেনি এই বাড়ি যাওয়ার সময় পরেছে রাস্তায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য… তিনি মানতেই নারাজ।
আজ অবশ্য ওনার মেয়েও জিন্স পরে… বিদেশে থাকে। অবস্থা মানুষকে অনেকটাই বদলিয়ে দেয় আরকি।
আব্বুকে কতবার কতজন বলেছে মেয়েদের এতটা বাড়তে দেওয়া ঠিক নয়..
একবার আমার আব্বুর এক খালাতো ভাই বলেছিলো মেয়েকে ইঞ্জিনীয়ারিং পড়িওনা ভাই… ও লাইন খারাপ। ভদ্রলোকের মেয়েদের জন্য না।
যাগগে, আমার আব্বু লোকের কথায় বিশেষ কান দিতো না এই রক্ষে… বরং আম্মু দুদিন মন খারাপ করে বসে থাকে যে লোকে বলছে মেয়ে মানুষ করতে পারিনি ইত্যাদি প্রভৃতি … তারপর আবার উৎফুল্ল হয়ে যায়।
সেই ভদ্রলোকের দুটো মেয়ে… তিনি মেয়েদের ইঞ্জিনীয়ার কিংবা ডাক্তার করবেন ভেবেছেন। ঐ একই কথা অবস্থা মানুষকে বদলিয়ে দেয় কিংবা পরের ছেলে পরমানন্দ, যত উচ্ছন্নে যায় তত আনন্দ!
তা এখন দেখি আত্মীয় স্বজনদের মেয়েরা অনেকেই জিন্স পরে… ভালোই লাগে। সমাজ এগোচ্ছে… আমরা যে প্রতিকূলতা পার হয়েছি সেইটা পরবর্তী প্রজন্ম যেন অনুভব না করে।
অনেকদিন পরে একটা ঢপের লেখা লিখলাম আরকি… হঠাৎ মনে পরে গেলো। অভিমান বেরিয়ে যাওয়া ভালো… ভিতরে রয়ে যাওয়া কাজের কথা না।
যে সারাদিন বই পড়ে আর কিছু হলেই লেকচার দেয়। অতএব এই রকম একটা ধারণা হলো এতো বেশি বই পড়ার কারণেই অসভ্য মেয়ে হয়েছি।
একবার আমার এক ফুফুমণির বাড়িতে এক বিয়েতে গেছি। বিয়ে শেষে ফিরবো গাড়িতে… তা ফুফুমণির বাড়ি সে চব্বিশ পরগণার দূর এক গ্রামে… বর্ধমান থেকে অনেক দূর, তাই আবার জুনমাসের প্যাচপেচে গরম। অতএব আমরা দুবোনেই জিন্স পরেছি। ফুফুমণির এক আত্মীয় ছিলেন সাংঘাতিক রিগ্রেসিভ… মেয়েদের কি করা উচিত কি করা উচিত নয় তার উপর লেকচার দিচ্ছেলেন। আমিও খুব তর্ক করছি।
শেষে উনি বললেন মেয়ে শিক্ষিত হয়েছে বটে, কিন্তু মানুষ হয় নাই।
ফুফুমণিও বললেন যে আমার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সামনে নাক কেটে দিলি… এখানে জিন্স পরার কি দরকার ছিলো ইত্যাদি প্রভৃতি।
যতই বোঝানো হোক যে জিন্স তো সারাক্ষণ পরেনি এই বাড়ি যাওয়ার সময় পরেছে রাস্তায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য… তিনি মানতেই নারাজ।
আজ অবশ্য ওনার মেয়েও জিন্স পরে… বিদেশে থাকে। অবস্থা মানুষকে অনেকটাই বদলিয়ে দেয় আরকি।
আব্বুকে কতবার কতজন বলেছে মেয়েদের এতটা বাড়তে দেওয়া ঠিক নয়..
একবার আমার আব্বুর এক খালাতো ভাই বলেছিলো মেয়েকে ইঞ্জিনীয়ারিং পড়িওনা ভাই… ও লাইন খারাপ। ভদ্রলোকের মেয়েদের জন্য না।
যাগগে, আমার আব্বু লোকের কথায় বিশেষ কান দিতো না এই রক্ষে… বরং আম্মু দুদিন মন খারাপ করে বসে থাকে যে লোকে বলছে মেয়ে মানুষ করতে পারিনি ইত্যাদি প্রভৃতি … তারপর আবার উৎফুল্ল হয়ে যায়।
সেই ভদ্রলোকের দুটো মেয়ে… তিনি মেয়েদের ইঞ্জিনীয়ার কিংবা ডাক্তার করবেন ভেবেছেন। ঐ একই কথা অবস্থা মানুষকে বদলিয়ে দেয় কিংবা পরের ছেলে পরমানন্দ, যত উচ্ছন্নে যায় তত আনন্দ!
তা এখন দেখি আত্মীয় স্বজনদের মেয়েরা অনেকেই জিন্স পরে… ভালোই লাগে। সমাজ এগোচ্ছে… আমরা যে প্রতিকূলতা পার হয়েছি সেইটা পরবর্তী প্রজন্ম যেন অনুভব না করে।
অনেকদিন পরে একটা ঢপের লেখা লিখলাম আরকি… হঠাৎ মনে পরে গেলো। অভিমান বেরিয়ে যাওয়া ভালো… ভিতরে রয়ে যাওয়া কাজের কথা না।
.পড়ে বেশ মজা পেলাম ৷ ছোটবেলায় আমিও দেখেছি দিদিদের উপর এমন নিষেধাজ্ঞা চাপতে ৷ ছোটবোনরা আবার অনেক স্বাধীনতা পেয়েছে ৷
ReplyDelete"কিন্তু উনি কখনোই আমাকে বারণ করেননি তর্ক না করতে…" — এখানে দুবার "না" হয়ে গেছে ৷ হওয়া যেত এমন — "কিন্তু উনি কখনোই আমাকে বারণ করেননি তর্ক করতে… "